Tue. Dec 5th, 2023

    অল্প বয়সেই বিয়ে হয় রোজিনা আক্তারের। রোজিনার স্বামী জামান মিয়া তখন            নিরা;পত্তা কর্মীর কাজ করতেন। সংসারে বাড়তি আয়ের জোগান দিতে ২০০০ সালে BFMEA ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে               (বর্তমানে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি) পরিচ্ছন্নতা-কর্মী হিসেবে চাকরি নেন রোজিনা। চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন আগেই

     

    তাঁর কোলে এসেছিল প্রথম সন্তান। তিন মাসের সন্তানকে            ঘরে রেখে কাজে যেতেন তিনি।   প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরো’নোর পর রোজিনার পড়া;শোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষা*প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে শিক্ষার পরিবেশ দেখে             খুব আনন্দ হয় তাঁর। সুযোগ পেলেই ছাত্র-ছাত্রী’দের জিজ্ঞেস করতেন, তাঁরা কী নিয়ে পড়া’শোনা করছেন, ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করলে              চাকরি পাওয়া সহজ হবে। রোজিনা বলেন, ‘আসলে আমি নিজের ছেলে-মেয়েদের                 জন্য এসব শুনতাম। আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। কিন্তু আমার বাচ্চারা যেন পড়াশোনা

    করতে পারে, সেটা সব সময়ই চাইতাম।’   রোজিনার কর্মস্থল এখন ইনস্টিটিউট থেকে                বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। অন্যদিকে রোজিনার সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। রোজিনা কর্মস্থল BGMEA ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতেই (বিইউএফটি) বড় ছেলে রায়হান আহমেদ ও                 মেয়ে তানিয়া আক্তার এখান MBA করছেন। আর ছোট মেয়ে নুপুর আক্তার নরসিংদীর রায়পুরা কলেজে                   HSC প্রথম বর্ষে পড়ছেন।  রোজিনার স্বপ্নপূরণের এই গল্পের পেছনে            রয়েছে ২১ বছরের সংগ্রামের আরেক গল্প। স্মৃতির পাতা উ’ল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়েদের বড় করতে অনেক মানুষের

     

    কথা শুনছি, অনেক কষ্ট করছি। তিন মাসের ছেলেটারে ঘরে রেখে যখন কাজে যাইতাম, তখন                 সেটা কেউ ভালো চোখে দেখত না। যখন ওদের বড় জায়গায় পড়াই-তে চাইছি তখনো অনেকে বলছে, ছোট একটা চাকরি করে এত কষ্ট করে              ছেলে-মেয়েদের পড়ায় কী হবে?’

    মেয়েদের পড়ালেখা না করিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পরা’মর্শও দিয়েছে কেউ কেউ। তবে রোজিনা অন্যদের এসব               পরামর্শ কানে নেননি। এগিয়ে;ছেন আপন গতিতেই। তিনি বলেন, ‘মানুষের কথায় আমি থামিনি। ঘরের টিভি বিক্রি করে বড়              মেয়ের পড়ার খরচ দিছি। পড়াশোনা অল্প করার কারণে আমি সারা জীবন ফলভোগ করছি। আমার ছেলে-মেয়েরাও আমার মতো                কষ্ট করুক সেটা আমি চাই না।’

     

    মায়ের বাড়ি নরসিংদীতে রেখে প্রথম দুই সন্তানকে HSC পর্যন্ত                      পড়িয়েছেন রোজিনা। বিভিন্ন সময় বিউএফটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে রোজিনা তাঁর বড় ছেলে রায়হান ও মেয়ে তানিয়াকে            ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি করান। এরপর তাঁরা দু-জনই অ্যাপারেল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজিতে BSc সম্পন্ন করেন।    রায়হান বলেন, ‘আমরা তো গ্রামের স্কুল-কলেজে বাংলা মাধ্যমে                  পড়াশোনা করছি। এরপর যখন ইউনি*ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম তখন তো সব পড়াশোনা ইংরেজিতে। শুরুতে অনেক ভয় পেতাম। কিন্তু আম্মা আমাদের সব সময়                   সাহস আর উৎসাহ দিয়েছে যে আমরা ভালো করবই।’  এদিকে রোজিনাকে সাহস জুগিয়েছে

     

    বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোজিনার দুই সন্তানই সম্পূর্ণ বিনা খরচে                     বিশ্ববিদ্যালয়*টিতে পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই দুজন শিক্ষার্থীর মতো আর্থিক-ভাবে                     উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরই বৃত্তি দিয়ে থাকি। শিক্ষার জন্য অর্থ কোনো বাধা হতে পারে না।’    নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী রোজিনার মনোবল আর সাহসেরও                   প্রশংসা করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘একজন মা যদি একবার বুঝতে পারে তাঁর সন্তানের উন্নতির               জন্য করণীয় কী—তখন আর কেউ তাঁকে আটকাতে পারেন না। এটির উজ্জ্বল উদাহরণ হলো রোজিনা আক্তার। একজন মা হিসেবে তাঁর এই দূরদর্শী আর সাহসী           সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।’

     

    রোজিনার এই সাহস আর তাঁর সন্তানদের সাফল্য দেখে দেশের আরও অনেক পরিবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পাবেন বলে করেন তিনি।

    Source: Daily Prothom alo