ভারতের ইয়র্কার রাজা হিসেবে পরিচিত টি নটরাজনের যাত্রা সহজ ছিল না। একটা সময় ছিল যখন টি নটরাজনের টেনিস বল কেনার ক্ষমতা ছিল না, তিনি তার মায়ের সাথে রাস্তায় মুরগি বিক্রি করতেন। আজ টি নটরাজন ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে ক্রিকেট খেলছেন। জেনে নিন ক্রিকেটার হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সংগ্রাম।
2020 সালের আইপিএল শেষ হওয়ার পর ভারতের এই উঠতি তারকার চর্চা কেবল দেশে নয়, সারা বিশ্বে শুরু হয়েছিল। যার কাছে টেনিস বল দামি ছিল সে চামড়ার বলের বাদশা হয়ে ওঠেন। এই ভারতীয় ইয়র্কার কিংয়ের পুরো নাম থাঙ্গারাসু নটরাজন।
টি নটরাজন 27 মে 1991 সালে তামিলনাড়ুর সালেমের একটি ছোট গ্রাম চিন্নাপ্পাট্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। টি নটরাজনের পুরো নাম থাঙ্গারাসু নটরাজন। তাঁর বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বাবা চাকরি করতেন। তার মা রাস্তায় মুরগি বিক্রি করতেন। একটা সময়, টি. নটরাজনের পরিবার কখনও কখনও একবেলা খাবারও পেত না। তাকে অনেক সময় খালি পেটে ঘুমোতে হয়েছে।
তিনি যখন টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন, তখন তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কয়েকদিন খেলা বন্ধ করলেও হাল ছাড়েননি তিনি। মাঠে ফিরতে সময় লাগলেও তাঁর প্রত্যাবর্তন সবাইকে অবাক করে দেয়। এক ওভারে ৬টি ইয়র্কার ছুঁড়ে সবাইকে চমকে দেন তিনি।
তার পরামর্শদাতা এ. জয়প্রকাশের চোখ তাঁর উপর পড়ার পর থেকেই নটরাজনের জীবন বদলে যায়। তিনি তাকে চেন্নাই পাঠায়। 2011 সালে তামিলনাড়ু থেকে তিনি প্রথম সুযোগ পান ও ভালো পারফর্ম করেন। তার পারফরম্যান্স তাকে রঞ্জি ট্রফিতে জায়গা করে দেয়। তামিলনাড়ুর হয়ে প্রথম রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ 5 জানুয়ারী 2015 এ খেলেছিলেন তিনি। 2017 সালে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাকে 3 কোটি টাকায় কিনেছিল। কিন্তু ছয় ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র 2 উইকেট। পরে চোট পেয়ে খেলেননি।
খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে আইপিএলে 3 কোটির মূল্য 40 লাখ হয়ে গিয়েছিল। এই দামে তাকে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কিনে নেয় এবং তার জীবন বদলে যায়। আজ আইপিএলেও তার আলাদা পরিচয়। একসময় থাকার জন্য কোনো বাড়ি ছিল না তাঁর। টাকা পেয়ে সর্বপ্রথম বাড়ি তৈরি করেন তিনি। এছাড়াও গ্রামে শিশুদের জন্য একটি ক্রিকেট একাডেমি চালু করেন।
টি নটরাজন 2020 আইপিএলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানকে আউট করেছিলেন। শেষ মৌসুমে তিনি 60টি ইয়র্কার করেছেন। আইপিএলের পর অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলে জায়গা পান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। বরুণ চক্রবর্তীর ইনজুরির কারণে তাকে দলে জায়গা দেওয়া হয় এবং তিনি সেই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন এবং একই সফরে সব ফরম্যাটে অভিষেক করেন।