Sat. Sep 23rd, 2023

    হাসান মাহীন। ইলেক’ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক’ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স করেছেন “আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে”। মাস্টার্স করে*ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন ছিলেন BCS ক্যাডার হয়ে দেশ*সেবা করবেন। একবুক স্বপ্ন নিয়ে BCS দিলেও সেখানে তিনি ব্যর্থ হন।

    নন-ক্যাডারে সুপারিশ*প্রাপ্ত হওয়ায় তার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। এরপর জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক ব্যর্থতা এসেছে তার জীবনে। ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে এখন তিনি বিশ্বের সব’চেয়ে বড় স্যাটেলাইট কোম্পা*নির সফল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন।

     

    তার এখন মাসিক বেতন কত জানেন? ১২ হাজার ডলার। যা বাংলা’দেশি টাকায় দশ লাখ টাকারও বেশি। জীবন সংগ্রামে সফল সেই হাসান মাহীন বাংলাদেশ টাইমসের সঙ্গে তার সফ-লতার গল্পটা শেয়ার করেছেন। চলুন সফল হওয়ার গল্পটা তার মুখ থেকেই শোনা যাক-

    মাহীন বলেন, SSC, HSC দুটোতেই প্রথম বিভাগ ছিল আমার। ভর্তি পরীক্ষাতে ভাল বিশ্ব-বিদ্যালয় এর ভাল কোন সাবজেক্ট এ চান্স না পেয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য AIUB তে ভর্তি হই। অবশ্য আমার ইচ্ছা ছিলো মেডি’কেলে পড়ার। কিন্তু সেখানেও ওয়েটিং লিস্ট
    তবে সেটা নিয়ে আমার আফসোস নেই। AIUB থেকে মোটামুটি CGPA নিয়ে পাশ করে গ্রামীন ফোনে ইন্টার্নি হিসাবে জয়েন করি। এরপর কিছুদিন সেখানে কাজ করার পর কন্ট্রাক্ট শেষ হলে, কি করবো বুঝে উঠতে পার’ছিলাম না।

     

    তারপর একটা মাল্টি-ন্যাশনাল গার্মেন্টে পরীক্ষা দেই। প্রায় ১১০০ প্রার্থীর মধ্যে ওরা ১২ জন পছন্দ করে গার্মেন্টের নাম ছিলো Lenny Fashion সম্ভবত। তো আমি ছিলাম ইঞ্জি’নিয়ারিং টিমে। বেতন ১২০০০ টাকা। খাওয়া এবং যাতায়াত ফ্রি।

    ৬ মাসের ট্রেইনি পিরিয়ড। তো যাই হোক, জীবনে প্রথম গার্মেন্ট কোম্পা’নিতে পা রাখলাম। আমার ইন্ডিয়ান বস আমাকে খুব পছন্দ করে’ছিলেন। কিন্তু একদিন চাকরি করে অসম্ভব শব্দের কারণে সেই চাক’রিটা আর করা হয়নি। আব্বা খুব রাগ করে*ছিলো সেদিন।

    এরপর টানা এক বছর একটা ছোট সাবকন কোম্পা’নীতে BTS ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতাম ১৫০০০ টাকায় প্রতি মাসে। তারপর একটা বেসর’কারি পাওয়ার প্ল্যান্ট জিবিবিতে পরীক্ষা দিলে, তারা আমাকে অনু’গ্রহ করে নিয়ে নেয়। বেতন ছিল শিক্ষা নবীশ পিরি’য়ডে ১২০০০ টাকা। এটা ২০০৯ সালের শুরুর কথা। তারপর সেখানেই কেটে গেল ৭ বছর। শিক্ষা-নবীশ থেকে সিনিয়র ইঞ্জি*নিয়ার হলাম। বেতনও বাড়লো ভাল।

     

    এর মাঝে বুয়েটে ভর্তি হলাম ২০১২ সালে। বৃহস্পতি-বার শিফটিং ডিউটি দুপুরে শেষ করে বগুড়া থেকে ঢাকা যেতাম। সন্ধ্যায় ক্লাস করে রাতের বাসে আবার বগুড়া যেতাম। সকালে আবার অফিস করে আবার ঢাকা যেতাম। শুক্র’বার আর শনিবার ক্লাস করে আবার বগু’ড়া যেতাম। এভাবেই ২ বছর কেটেছে। এরপর ৩ তম BCS দিলাম চাকরি করতে করতে। আমি আমার জীবনে এতো পড়া’লেখা করিনি যেটা BCS এ করেছি।

    সব পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। ভাইভাও ভাল দিয়ে*ছিলাম। কিন্তু রেজাল্ট যখন দিল, দেখা গেল আমি নন-ক্যাডারে মনো’নীত হয়েছি। এতো খারাপ লেগেছিলো বলে বুঝাতে পারবোনা। অফিসের সবাই অনেক সান্তনা দিয়ে*ছিল। এরপর একটা জাপানিজ কোম্পানীতে পরীক্ষা দিয়ে জাপানে চলে আসি মেইন্ট্যানেন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখানে দুই বছর ৬ মাস থাকার পর চাকরি চেঞ্জ করি।

     

    তারপর আবার চাকরি চেঞ্জ করি, তখন অ্যামাজন আর ইন্টেলস্যাট ২ জায়গা*তেই চাকরি পেয়েছিলাম। তবে ইন্টেলস্যাট বেছে*নিয়েছিলাম কারণ এখানে স্পেস নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। এখন ইন্টেলস্যাটে নেটওয়ার্ক ইঞ্জি’নিয়ার হিসেবে আছি।

    এই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি যেটা করেছি, সেটা হল আমার সাব’জেক্টের ওপর নিয়মিত পড়াশোনা। পাশা-পাশি ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করেছি। আমার বর্তমান কোম্পানিতে জাপা’নিজ ভাষার দরকার না হলেও, আমি নিজের ভাষা’গত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চাকরির ফাঁকে ফাঁকে জাপা’নিজ স্কুলে ক্লাস করেছি এবং N3 Level পাশ করেছি।

    চাকরির পাশাপাশি Networking এর জন্য CCNA, Gilat Sky Edge করেছি।
    কারণ আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই, আমি সক্ষম। ধৈর্য্য হারা’ইনি কখনও।
    আমি কখনো অন্যের সাথে প্রতি-যোগিতা করিনি। যা করেছি তা নিজের সাথে অনেক খারাপ পরি*স্থিতি আমি পার করেছি। অনেকে অনেক কিছু বলেছে, আল্লাহর উপর ভরসা করেছি, আর চেষ্টা করে গেছি।

     

    আলহামদুলিল্লাহ, আমি সন্তুষ্ট কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি কিছু শেখার। আমি কিন্তু AIUB তে ভাল বিতা-র্কিক ছিলাম। জাপানে আসার পর বর্তমানে একটু আধটু প্লেন চালানো শিখছি এখন। যেটা নিতা*ন্তই একটা আমার শখ বলতে পারেন।