Sat. Jun 10th, 2023

    …………………………

    মনের ভেতরে ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ছাত্রজীবনে বাবার কারণে মেডিকেলে পড়তে হয়েছে। ওই সময় তিনি বাবার কাছ থেকে ১০-২০ টাকা করে নিয়ে জমিয়ে ২০ হাজায় টাকায় একটি ছাগল কেনেন। ওই ছাগল থেকে ৩টি বাচ্চা হয়।
    ……..
    বাচ্চা বিক্রি করেন এক লাখ টাকায়। সেখান থেকে আরও কিছু জমানো থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে একটি শংকর জাতের গাভী কেনেন ও দুটি ছাগল কেনেন তিনি। সেই থেকে গরু ও ছাগল পালনের যাত্রা শুরু তার।

    …………………………

    ১২ বছরে আগের শখ থেকে নেশা, নেশা থেকে জয় করে বর্তমানে তিনি কোটি টাকা মূল্যের ৫০টি ছাগল ও ২৫টি গরুর মালিক। তার খামারের নাম ‘রাসেল ডেইরি ফার্ম। গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত খামারি।

    শুক্রবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদী অধ্যুষিত চরাঞ্চল এলাকা, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের রাসেল ডেইরি ফার্ম ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।

    উত্তর-চরবংশী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান যুবক রাসেলের গরু ও ছাগল পালন দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ। তার পরামর্শ নিয়ে ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক বেকার এখন খামার করার প্রক্রিয়া নিচ্ছেন।

    সরেজমিন রাসেলের ডেইরি ফার্মে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ জমির উপর খামার গড়ে তুলেছেন রাসেল। সারি সারি বাঁধা রয়েছে বকনা গরু ও ছাগল। একটি গাভী ও একটি ছাগল থেকে বংশবৃদ্ধি। সেই ২০১০ সালে ফিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই প্রজনন সম্প্রসারণ শুরু। বর্তমানে খামারে ২টি ষাঁড়, ১৫টি গাভী ও ১০টি বাছুর সর্বমোট ২৫টি গরু।

    এখানে একই জাতের গরু, অন্য কোনো জাত নেই। বর্তমানে দুধ দিচ্ছে ১৫টি গাভী। প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ দেয় তারা। গাভীর বাছুরগুলোকে যত্নে রাখা হয়েছে, যেন কোনো রোগবালাই না হয়। তার ফার্মে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগল রয়েছে।

    …………………………

    নিজ বাড়িতে তিনি দেশীয় জাতের ব্লাক ব্যাঙ্গল ছাগল, মোরগ-মুরগি, কবুতর পালনও শুরু করছেন। আরও বড় পরিসরে খামার বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাসেল। সবকিছুই বেশ পরিপাটি।

    গরু ও ছাগলের সফল খামারি রাসেল ঢালি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে যুগান্তরকে বলেন, ইচ্ছা ছিল ব্যাংকার হব। কিন্তু মেডিকেল লাইনে পড়তে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আজ খামারের পরিধি বেড়েছে অনেক। খামারে গাভীর সংখ্যা বেশি। বর্তমানে ১৫টি গাভী থেকে ১০০ লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ১৫ হাজার টাকায়। খামারের বাছুরই হলো লাভের অংশ। বছর শেষে ৪০টি বাচ্চা হয় সাধারণত। বাছুর থেকে আয় হয় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

    বর্তমানে সর্বসাকুল্য তার দেড় কোটি টাকার গরু ও ছাগল রয়েছে। তার খামারে বোয়ার, তোতাপুরি, হারিয়ানা, বিটল, শিরহি ও যমুনাপারি নামের জাতের ছাগল রয়েছে। তার খামারে পিতা, মাতা, স্ত্রী, ভাইসহ ৫ জন কর্মচারী সহযোগিতা করেন।

    রায়পুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাসেলের খামারের গরু ও ছাগলগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। তার দেখাদেখি অনেক যুবক হাসপাতালে এসে পরামর্শ নিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে রাসেলকে সহযোগিতার জন্য আমরা চেষ্টা করব।