Thu. Mar 30th, 2023

    একসঙ্গে জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। সব ক্ষেত্রে দুজনের ফলাফলও একই। যমজ দুই বোন এবার একসঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন চিকিৎসাশাস্ত্র পাঠের। তবে আলাদা প্রতিষ্ঠানে। ফাহমিদা তাজিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এবং মাহমুদা তারিন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।

    চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দীন ও নাজমুন নাহার দম্পতির যমজ কন্যাদের সাফল্যে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে চলেছে।

    শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ফাহমিদা ও মাহমুদা এর আগে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনে তাঁরা দুজনে শহরের ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেছেন।

    ধারাবাহিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দুই বোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, প্রথমত মানবিক মানুষ হতে চান। চিকিৎসকদের নিয়ে যত নেতিবাচক ধারণা মানুষের মনে আছে, সে ধারণা কাটিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান।

    আজ শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজপাড়ার বাড়িতে গিয়ে ফাহমিদা ও মাহমুদাকে ঘিরে স্বজনদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে। মেডিকেল কলেজের ভর্তির ফলাফল ঘোষণার পর পরশু তাঁরা দুজনই বাড়িতে ফিরেছেন। নাতনিদের সাফল্যের খবর শুনে ছুটে এসেছেন নানা মো. নুরুজ্জোহা ও দাদা নিজাম উদ্দীন বিশ্বাস। বোনদের সাফল্যে আনন্দিত বড় বোন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সম্মান (হিসাববিজ্ঞান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও একমাত্র ভাই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আয়মান।

    ফাহমিদা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি বিষয়ের মতো পড়াশোনার বেলায় দুই বোন একই মতের ছিলেন। দিনরাত নাওয়া-খাওয়া-ঘুম হারাম করে ১৮-২০ ঘণ্টা পড়াশোনা করার রেকর্ড তাঁদের নেই। তবে যতটুকু পড়েছেন, নিয়ম মেনে বুঝেশুনে পড়েছেন। কোনো দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেননি। শিক্ষকদের প্রতিটি কথা মনোযোগসহকারে শোনার পাশাপাশি লিখে রেখেছেন। যা বাড়িতে ফিরে পুনরায় পড়েছেন। সব মিলে নিয়মানুবর্তিতা তাঁদের এ সাফল্য এনে দিয়েছে।

    মাহমুদা যোগ করেন, নিজেদের মধ্যে মৌন প্রতিযোগিতা থাকলেও হিংসা-বিদ্বেষ মনোভাব কখনোই ছিল না। একজন পিছিয়ে পড়লে তাঁকে এগিয়ে নিতে অন্যজন বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। মাহমুদা বলেন, ‘প্রাথমিকের শুরু থেকেই বাবা-মা বলতেন, যতক্ষণ পড়বি, অন্তত সেই সময়টুকু মাথা থেকে অন্যান্য চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিবি। আমরা সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।’

    কথায় কথায় তাঁরা জানালেন, পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বোনই সংবাদপত্রের একনিষ্ঠ পাঠক। বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে নেওয়া হয় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। খেলার পাতা দুজনেরই খুব পছন্দ। এ ছাড়া কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা ও চলতি ঘটনাও পড়েন।

    সন্তানদের সাফল্যে মা নাজমুন নাহার বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। সাথে ওদের নিরলস চেষ্টা সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও বড় অবদান রয়েছে।’ বাবা মো. নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মেয়েদের নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে চলার জন্য আমরা উৎসাহ দিয়েছি। বিশেষ করে বিলাসিতা-উচ্ছৃঙ্খলতা কখনো তাঁদের ধারেকাছে ভিড়তে পারেনি।’

    চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাহমিদা ও মাহমুদা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি এই কলেজকেও সম্মানিত করেছে। তারা আলোকিত মানুষ হোক, সেটাই প্রত্যাশা।’