Sat. Jun 10th, 2023

    …………………………

    খোদেজা খাতুন। ১১ বছর বয়স থেকেই ভিক্ষার টাকায় কোনোরকমে চলছে তার জীবন। এখন বয়স ৬৫। এখনো ভিক্ষার টাকায় আগুন ধরে তার মাটির চুলায়। দুর্ভাগা এই জীবনে ছোট থাকতেই হয়েছে বিয়ে আবার অল্প বয়সেই হারাতে হয়েছে স্বামীকে। স্বামীকে হারিয়ে বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি।
    …..
    ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভিক্ষাই খোদেজা খাতুনের জীবনের একমাত্র আয়ের উৎস। ভিক্ষা থেকে সঞ্চিত সামান্য টাকায় কিনেছিলেন একটি বাছুর। সেই সম্বলটুকু বিক্রি করে ৯ হাজার টাকা সঞ্চয় রেখেছিলে স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি নামে একটি এনজিওর কাছে। নতুন ঘর তৈরির স্বপ্ন নিয়ে চার বছর ধরে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতেন সমিতিতে। তবে কিছুদিন ধরে এনজিও থেকে আসে না কেউ, নেয় না খোঁজ।

    …………………………

    খোদেজা গ্রামের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন সমিতির কোনো হদিস নেই, টাকা নিয়ে উধাও মাঠকর্মী। এই খবরে এখন ঘুম নেই খোদেজা খাতুনের। টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ছুটছেন দ্বারে দ্বারে। তার মতোই অবস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির আরো পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের।

    এভাবেই দিনের পর দিন সহজ-সরল গ্রামবাসীর চোখে ধুলো দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি। টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ছুটেও কোনো সুরাহা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সড়কে নেমেছেন গ্রাহকরা। মানববন্ধন করে নিজেদের প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা।

    রোববার দুপুরে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক গ্রাহক সমবেত হয়ে মানববন্ধন করেছেন। এর আগে, একইদিন সকালে ঐ উপজেলার কৃষ্ণেরচর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে ঐদিন বিকেলে স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির মাঠকর্মী পরিচয়ে টাকা উত্তোলনকারী ইমরান হোসেনসহ চারজনের বিরতুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

    অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চার বছর ধরে স্বাবলম্বীর মাঠকর্মী ইমরান হোসেন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করছিলেন। তবে ঋণ চাইলেই নানা টালবাহানা করে গ্রাহকদের ঘুরাতেন। করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুর পৌর এলাকার বাগিচাপাড়া অফিস ছেড়ে দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঞ্চয় নিতেন ইমরান। সম্প্রতি সমিতির ১৯৮ জন গ্রাহক তাদের টাকা ফেরত চাইলে পালিয়ে যান ইমরান হোসেন। সঙ্গে নিয়ে যান প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা।

    …………………………

    স্থানীয়রা জানায়, এ নিয়ে দুইবার গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো প্রতিবার সালিশ থেকে কৌশলে পালিয়ে যান স্বাবলম্বীর মাঠকর্মী ইমরান।

    ভিক্ষুক খোদেজা খাতুন জানান, আমি ভিক্ষা করি। মাইনষের থিকা যা পাই, তা দিয়ে সংসারই চলে না। এনটিকা খাইয়া না খাইয়া কিছু টেয়া সমিতিতে রাখছিলাম। অনেক টেয়াই জমছিলো, একটা ঘর করবাম চিন্তা করছিলাম। এহন মাইনষের কাছে হুনতাছি টেয়া লইয়া নাকি পলাইয়া গেছে। এহন আমি কি করবাম?

    গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোতালেব বলেন, কয়েকদিন আগে গ্রামবাসীর কাছ থেকে স্বাবলম্বী এনজিওর টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানতে পারি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং যে মাঠকর্মী টাকা উত্তোলন করেছে তাকেও খুঁজে বের করি। পরবর্তীতে দুই দফা সালিশের ব্যবস্থা করি। গ্রাহকরা ওই মাঠকর্মীর কাছে অনেক টাকা পাবে। বিষয়টি সবার সামনে নিয়ে আসার পরই কৌশলে পালিয়ে যায় মাঠকর্মী ইমরান। আমি গ্রামবাসীকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তাদের পাশে থাকব।

    দুর্গাপুরের ইউএনও রাজিব উল আহসান বলেন, রোববার গ্রামবাসী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। তাদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। গ্রামের হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন পাশে আছে।