Tue. May 30th, 2023

    …………………………

    প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছে দেশের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ফলাফল প্রকাশের পরই শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
    …..
    তাদেরই একজন নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবির। তিনি ইংরেজিতে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও ২২ পেয়েছেন। আবার বাংলায় ৩১টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও ফলাফলে ৪টি উত্তর দিয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করা আবু নোমান সালমান ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ২২.৫০ নাম্বার পান এ শিক্ষার্থী।

    …………………………

    তিনি বলেন, বাংলা অংশে ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৩৫টি ভরাট করেছি কিন্তু রেজাল্টে দেখাচ্ছে বাংলায় ২০টা ভরাট। আবার ইংরেজিতে ৩৫টার মধ্যে ১৭/১৮টা কিন্তু ফলাফলে দেখাচ্ছে ইংরেজিতে ৩০টা ভরাট করেছি। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়েই উত্তর করেছিলাম। আমার হিসেব অনুযায়ী আমি ৪৩/৪৪ মার্কস পাওয়ার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত ভরাট দেখিয়ে সেটা আবার মাইনাস দেখাচ্ছে, পেয়েছি ২২.৫০।

    এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি সেকেন্ড টাইমার পরীক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে প্রায় ২টা বছর ধরে প্রস্তুতি নিলাম। অনেক স্বপ্ন ছিলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু গুচ্ছ পরীক্ষার এমন ফলাফলে আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

    একই বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা মুবাশ্বির আহমেদ। প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৪৬ নাম্বার পান এ শিক্ষার্থী। তবে ভর্তি পরীক্ষার বাংলা অংশে ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর করলেও প্রকাশিত ফলাফলে বাংলা অংশে ২৮টি পূরণ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।

    …………………………

    এই শিক্ষার্থী বলেন, কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাবজেক্ট পেলেও এত কম নাম্বারে জন্য আমি ভালো সাবজেক্ট পাবো না। আমাদের স্বপ্ন নিয়ে এরকম খেলা করার কোনো মানে হয় না।

    মুন্সিগঞ্জের আরেক শিক্ষার্থী সজিব হাসান ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, ইংরেজি থেকে ৩৫টা প্রশ্নের সবই পূরণ করেছি, কমন ছিলো ২৭টা। এখন রেজাল্ট অনুযায়ী আমি নাকি ৩১টা এনসার করছি যেখানে ১১টাই আবার ভুল! প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৫৭.৫০ নাম্বার পান এ শিক্ষার্থী।

    এই শিক্ষার্থী বলেন, ইংরেজিতে এত কম নাম্বার পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। বিশ্বাস করেন, এদেশ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করিনাই আর করবোও না। ভর্তি আয়োজক কমিটির যাদের অবহেলার কারণে আমাদের স্বপ্ন ধংস হচ্ছে তাদের বিচার যেনো আল্লাহ করে।

    শুধু আবির, সালমান, মুবাশ্বির আর সজিবই নয়, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থীই প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

    …………………………

    এবিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ওএমআর পূরণ করতে ভুল করে। অর্ধেক ভরাট, অস্পষ্ট হলে কম্পিউটারে সেটা রিড করে না। এখানে ওএমআর সম্পূর্ণ কম্পিউটারের মাধ্যমে রিড হয়, তাই ফলাফল ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এরপরও যারা চ্যালেঞ্জ করতে চায়, বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার পর আমরা একটা নোটিশ দিবো। নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ফলাফল চেক করতে পারবে।

    গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আজ আমাদের ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সর্বোচ্চ মার্কস ৯৩.৭৫ আর সর্বনিম্ন মার্কস -০.৭।

    তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কম্পিউটারে রেজাল্ট কাউন্ট হয়েছে, ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো শিক্ষার্থী যদি অভিযোগের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে পরীক্ষা শেষে আমরা তাদের পুন:নীরিক্ষণের ব্যবস্থা করবো।