




…………………………





গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। অবশেষে এ বছর থেকে ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে শুরু করেছে। ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো এ ইউনিটের পরীক্ষা। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন মো. জান্নাতুল নাঈম।
……
প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, এটা প্রশংসনীয়
জুনায়েদ সাজ্জাদ
……
এইচএসসি উত্তীর্ণ, ময়মনসিংহ সরকারি কলেজ
……
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার অনুভূতি মিশ্র; কারণ, অভিজ্ঞতাটা আমাদের সবার জন্যই একেবারে নতুন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রশ্ন দেখে ধারণা পাওয়া যায়, বা আগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়া যায়। আমাদের সেই সুযোগ ছিল না। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে আমি সন্তুষ্ট। ছোটখাটো কিছু সমস্যা হয়েছে। যেমন অনেক কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ল্যাবে। যে ছেলেটা বাঁ হাতে লেখে অভ্যস্ত, তাঁর জন্য প্রথমবার ডান হাতলযুক্ত চেয়ারে পরীক্ষা দেওয়া সহজ নয় মোটেও। গুচ্ছ পরীক্ষা অনেকগুলো কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি, এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।





…………………………





বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন বেশি কঠিন ছিল
ফাতেমা জাহান
এইচএসসি উত্তীর্ণ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
গুচ্ছ নিয়ে আমার যে প্রত্যাশা ছিল, তা অনেকাংশেই পূরণ হয়েছে। আমার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর ছিল। দিকনির্দেশনার জন্য স্কাউটের সদস্যরা ছিলেন এবং শিক্ষকেরাও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। এ ছাড়া কেন্দ্র আমার বাসার কাছে হওয়ায় যাতায়াত সহজ ছিল। তাই এই পদ্ধতি আমার কাছে বেশ যুগোপযোগী মনে হয়েছে। তবে প্রশ্নের ধরন নিয়ে কিছু অভিযোগ আছে। সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হলেও প্রশ্নের মান শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো কঠিন হয়েছে, যা হওয়া উচিত ছিল মাঝারি মানের। আর যে পরিমাণ গাণিতিক প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল, সে অনুপাতে সময় ছিল কম।
অধিকাংশই ছিল গাণিতিক প্রশ্ন
মোহাম্মদ মুমতাহিন
এইচএসসি উত্তীর্ণ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ
আমার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো নয়। প্রথমত, আমার পছন্দের কেন্দ্রের তালিকা থেকে আমাকে কেন্দ্র দেওয়া হয়নি। ঢাকার শিক্ষার্থী হয়েও সারা রাত জেগে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ প্রশ্ন গাণিতিক ধরনের ছিল। তাই ৬০ মিনিটে ১০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। হাতঘড়ি নিতে দেওয়া হয়নি, পরীক্ষার হলেও কোনো ঘড়ি ছিল না। কেন্দ্রে ঢোকার আগে প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ব্যাগ, মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিরাপদে রাখা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। যেহেতু একটা বড় অংশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবক থাকেন না, তাই কর্তৃপক্ষ এসব জিনিস রাখার উদ্যোগ নিলে খুশি হব।





…………………………





বাসার পাশেই কেন্দ্র পেয়েছি
আশফিকা জাহান
এইচএসসি উত্তীর্ণ, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর
পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্নপত্র সম্পর্কে আমাদের যথেষ্ট ধারণা ছিল না। সাধারণত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু কঠিন প্রশ্ন হয়। তাই কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। পরীক্ষার প্রশ্ন আমার কাছে বেশ কঠিন মনে হয়েছে। গাণিতিক শর্তাবলি দিয়ে অনেক প্রশ্ন এসেছিল, যা প্রত্যাশা করিনি। তাই মেডিকেল কিংবা সাধারণ বিষয়গুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন সহজ মনে হয়নি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই গুচ্ছের বাইরে আলাদাভাবে পরীক্ষা নিলেই ভালো হবে বলে মনে করি। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ছোটাছুটি করতে হয়নি। বাসার পাশেই কেন্দ্র পেয়েছি। দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরাও এবার গুচ্ছতে সুযোগ পেয়েছে। এটাও ভালো দিক।
রাফ করার জায়গা পাইনি
সাইফুল ইসলাম
এইচএসসি উত্তীর্ণ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম
গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে সবার কাছ থেকে মোটামুটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই পেলাম। তবে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে প্রশ্নের ধরনের সামঞ্জস্য ছিল না। কখনো কখনো ১টি প্রশ্নের উত্তর করতেই ৫ মিনিটের মতো সময় লেগে গেছে। তাই মাত্র ৬০ মিনিটে এই মানের প্রশ্নের সমাধান করা খুব কঠিন। উপরন্তু প্রশ্নের পৃষ্ঠা কম থাকায় ও ফাঁকা জায়গার অভাবে গাণিতিক প্রশ্নে রাফ করার জায়গা পাইনি। যেহেতু ৬টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়েছিল, সেহেতু প্রশ্ন আরেকটু বড় ও স্পষ্ট করা যেত। একটি পরীক্ষার ওপর আমাদের অনেকের উচ্চশিক্ষার ভাগ্য নির্ভর করে, সুতরাং প্রশ্নের মান আরও ভালো করা উচিত।