Sat. Jun 10th, 2023

    …………………………

    একজন রাইটিং এসিস্ট্যান্ট না পাওয়ায় চাকরির পরীক্ষা দিতে পারছেন না সাইদুর রহমান। নানান প্রতিবদ্ধকতা জয় করে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেও নিয়মের বেড়াজালে চাকরির পরীক্ষায় কোনো রাইটিং এসিস্ট্যান্ট পাচ্ছেন না তিনি। ফলে বিভিন্ন পরীক্ষায় আবেদন করেও বসতে পারছেন না। তবে সাইদুরের চোখে এখন শুধু একটু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। নিজের যোগ্যতার বিচারে একটা চাকরি পাওয়া।
    ……
    জানা গেছে, জন্মের ছমাসেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন সাঈদুর রহমান। দুইপা ও হাত অচল হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ভরসা করেন হুইলচেয়ারে। অন্যজীবন শুরু হয় তবে অক্ষমতার কাছে হেরে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। দমে যাননি, অদম্য ছিলেন, শত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে উচ্চশিক্ষার পথ পাড়ি দিয়েছেন। বিশ্বাস করেন অসক্ষমতা মানে সবকিছু থেমে যাওয়া নয়, মনের জোরে বারবার জেগে উঠা।

    …………………………

    সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে শেষ করেছেন স্নাতক-স্নাতকোত্তর। ফলাফলে স্নাতকে পেয়েছেন সিজিপিএ- ৩.১৪। তার এই পড়াশোনার জীবনে পরীক্ষায় নিজে কোনোদিন লিখতে পারেননি। হলে বসে তিনি বলেছেন, পাশে বসা আরেকজন তা শুনে লিখেছেন।

    এবার ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে। পড়বেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (এইচআরএম) বিভাগে। এ পথে সহযোগিতা পেয়েছেন পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুদের।

    সাঈদুর কুমিল্লার ছেলে। দেবিদ্বার উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। রিয়াজ উদ্দিন পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সুজাত আলী কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করে ২০১৪-১৫ সেশনে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সে।

    জীবনে চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে আসার পর আক্ষেপ আছে সাঈদুরের। সেই আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, চাকরির বাজারে আমাদের যোগ্যতাকে দূরে ঠেলে শারিরীক দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে আসা হয়। যেকেনো চাকরির ক্ষেত্রেই এমনটি করা হয়। যিনি এমনটি করছেন তাকেই হয়তো তার চেয়ার ছেড়ে অন্য কারো কাছে যেতে হয়নি।

    …………………………

    সাঈদুরের দক্ষতা আছে কম্পিউটারের পাশাপাশি রিসার্চ, আদার্স ল্যাঙ্গুয়েজ এবং কমিউনিকেশনে। পাশাপাশি ডেইলি এশিয়ান এইজ এবং দি ডেইলি অবজার্ভারে প্রকাশিত হয়েছে তার বিভিন্ন এডিটোরিয়াল আর্টিকেল।

    সাইদুর শারীরিকভাবে প্রতিবদ্ধি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে আড্ডাসহ যেকোন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভালবাসেন। এছাড়া যৌক্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

    পড়াশোনার জন্য সর্বদা উদগ্রীব এই শিক্ষার্থীর আরেকটি আক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি নিয়ে। লাইব্রেরি অনেক উঁচুতে হওয়ায় কখনো চাইলেই যেতে পারেননা। অন্যের কাঁধে ভর করে যাওয়াও সম্ভব হয়না কখনো।