Sat. Dec 9th, 2023

    …………………………

    দেশের সড়ক, রেল, নৌপথের সব ধরনের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করারও দাবি জানানো হয়েছে।
    ……
    শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।

    …………………………

    তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর ঢাকা মহানগরীতে ১ ডিসেম্বর থেকে হাফ পাসের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও এখনো তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। রাজধানীর অনেক বাসে শিক্ষার্থীদের উঠানো হচ্ছে না। অনেক বাসে অর্ধেক ভাড়া নেয় না। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে তিনি শিক্ষার্থীসহ সব যাত্রীদের সম্মানের সঙ্গে গণপরিবহনে যাতায়াতের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

    মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন, পরিবহন সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সড়কে এমন অব্যবস্থাপনার জন্য তারাই দায়ী। এ সেক্টরের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে নেতৃত্বদানকারী পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃত্বের পরিবর্তন জরুরি।

    এ সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০ দফা সুপারিশমালা পেশ করে। এগুলো হলো:

    ১. সারাদেশের সড়ক, রেল, নৌ-পথে সব শ্রেণির গণপরিবহনে একজন শিক্ষার্থী তার ছাত্র জীবনে সার্বক্ষণিক এবং যেকোনো দিন, যেকোনো সময় আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে।

    …………………………

    ২. ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনে তুলতে অস্বীকৃতি জানালে, হাফ ভাড়া না নিলে, সংশ্লিষ্ট পরিবহনের চালক, সহকারী, কাউন্টারম্যান, টিকিট বিক্রয়কারীর কী শাস্তি হবে তা স্পষ্ট করে স্ব-স্ব মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করতে হবে।

    ৩. সব শ্রেণির গণপরিবহন দৈনিক চুক্তিতে ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণের শর্তানুযায়ী মালিক শুধু মুনাফা পাবে, এটি নিশ্চিত করতে হবে।

    ৪. সব শ্রেণির গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা স্পষ্ট আকারে, দৃশ্যমান স্থানে, যাত্রী সাধারণ যাতে সহজে পড়তে পারে সেই অনুযায়ী টাঙাতে হবে।

    ৫. দেশের সব পথের গণপরিবহনে মালিকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে।

    ৬. নারী যাত্রীদের কটূক্তি ও যৌনহয়রানিমুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

    ৭. সরকারি তালিকার অতিরিক্ত ভাড়া প্রদানের অস্বীকৃতি জানালে যাত্রীদের কটূক্তি করা, অপমান-অপদস্ত করা, নামার সময় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

    ৮. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের অভিযানে অভিযুক্ত বাসের মালিক-চালক-সহকারীর পাশাপাশি কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

    …………………………

    ৯. গণপরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

    ১০. মালিক সমিতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া ডাকাতি বন্ধে ওয়েবিল প্রথা বাতিল করতে হবে। যাত্রীর মাথা গুনে গুনে স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতকারীর ক্ষেত্রে পুরো পথের ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে।

    ১১. সিটি সার্ভিস ও শহরতলীর বাসের ভাড়া নির্ধারণে ৭০ শতাংশ গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই বাকি ৩০ শতাংশ আসনে শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি ও দাঁড়ানো যাত্রীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে।

    ১২. ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ডিজেল চালিত বাস, মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু দেশব্যাপী চলাচলরত সিএনজিচালিত হিউম্যান হলার, লেগুনা, বাস-মিনিবাসের ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। এসব যানবাহনে সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে ভাড়া নৈরাজ্য থেকে মুক্তি দিতে হবে।

    ১৩. বাসে উঠা-নামা সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।

    ১৪. বর্তমান সরকারের গত একযুগের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কে গতি বেড়েছে, বহু মহাসড়কে দূরত্ব কমেছে। তাই দূরপাল্লার রুটে যাত্রী প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি রুটে দূরত্ব জালিয়াতি ও কিলোমিটার চুরি বন্ধ করে ভাড়ার তালিকা সংশোধন করতে হবে।

    …………………………

    ১৫. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

    ১৬. কথায় কথায় যেকোনো ঠুনকো অজুহাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

    ১৭. যাত্রীর নিরাপত্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক উচ্ছেদ করতে হবে।

    ১৮. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা, আহত ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

    ১৯. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে সরকার ও মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করে বাস ও লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

    ২০. নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।