Thu. Mar 30th, 2023

    সবার জীবনই সংগ্রামে ভরা। সংকট মোকাবেলার শক্তি থাকাটাই সবথেকে বেশি জরুরি। জীবনে আবেগ ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই কঠিন নয়। লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবেগ ও ইচ্ছাশক্তি থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা এমন এক যোদ্ধার গল্প বলতে যাচ্ছি, যার জীবন ছিল নানা সমস্যায় ভরা। কিন্তু তিনি সব প্রতিকূলতাকে জয় করে জীবনে দারুণ সাফল্য পান। আজ সোলাপুর জেলার এই মহিলা লাখ টাকার ব্যবসার মালিক।

    সোলাপুর জেলার বারসি উপলাইয়ের স্বাতী থোঙ্গে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। স্বাতীর শৈশব কেটেছে অনেক স্নেহের মধ্যে। বাবার কোনো মেয়ে ছিল না, তাই স্বাতীকে খুব আদর করতেন তিনি। স্বাতী স্কুলে যাওয়া শুরু করে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। তবে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ছিল মেয়েদের পড়ালেখা করা উচিত নয়। এরপর স্বাতীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। লেখাপড়া করে ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায় স্বাতীর।

    ২০০১৬ সালে তার বাবা স্বাতীর বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু চার বছরের মধ্যেই তার জীবনে দুঃখের পাহাড় ভেঙে পড়ে। তার স্বামী মারা যান! তখন স্বাতীর মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাড়ে তিন মাস আর ছেলেটির বয়স দুই বছর। স্বামীর চলে যাওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতার প্রয়োজন থাকলেও তা পাননি। শ্বশুর সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। শ্বশুর বলেন নিজের বাচ্চাদের দেখাশোনা নিজেই করো, এই বলে তিনি স্বাতীকে আলাদা করে দেন।

    এরপর স্বাতীর বাবা তাঁকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। কিন্তু স্বাতী রাজি হননি। তিনি নিজের পরিচয় ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় গিয়েছে যে, প্রতি রাতে তাঁকে কাঁদতে হত। সে জানতো কান্নায় কিছু হবে না, তিনি জানতেন যে শিশুদের জন্য কিছু করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে স্বাতীর একটি মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্বাতীর ছেলে তাঁর কাকার কাছে মিষ্টির জন্য টাকা চাইত। আর ৫ টাকার জন্য তার কাকা তাকে মাঝে মধ্যেই অপমান করতেন।

    স্বাতী পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। সে জানত যে, ৫ টাকার জন্য যদি এত কিছু হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কত সমস্যা হতে পারে। স্বাতীর শাশুড়ি তাকে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ করার পরামর্শ দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। পরিবার স্বাতীকে হুমকি দিয়ে বলেছিল যে, সে যদি কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দিতে চায় তবে আমাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। এরপর স্বাতী একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সে ঠিক করে যে, সন্তানদের আর কারো কাছে টাকা চাইতে যেতে হবে না। এরপর সে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

    যখন তিনি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ শুরু করেন, তখন তার কাজ দেখে তাঁকে মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে কাজ করার সময় স্বাতী তার নিজের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন। সোলাপুরের একটি কৃষি স্টলে নিজের স্টল বসাতে চেয়েছিলেন স্বাতী। এ জন্য তার কাছে টাকাও ছিল না। মা এবং বাবা সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তিনি সেই সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তিনি তাঁর ম্যাডামের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ধার নিয়ে একটি চায়ের স্টল দেন। এই ২ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ৭ হাজার টাকা উপার্জন করেছিলেন। প্রথম ব্যবসায় তিনি ৫ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন।

    এরপর একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাকে মুম্বাইতে পাঠিয়ে দেয়। বারসির ৬টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গাইড ছিলেন স্বাতী। মুম্বইয়ে সেসব মহিলাদের জন্য জিনিসপত্র কেনেন স্বাতী, যারা কোনদিন মুম্বই যেতে পারেননি। টাকা না থাকায় তিনি ধার নিয়েছিলেন। তিনি মহিলাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকার সামগ্রী ধার নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি ফের মুম্বই থেকে এসে মহিলাদের টাকা শোধ করে দেবেন। সেই সামগ্রী স্বাতী ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপর স্বাতী নিজের মধ্যে এক ব্যবসায়ীকে দেখতে পান।

    এরপর তাঁর নিজের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছা প্রকাশ করেন ম্যাডামের কাছে। উড়দ ও শাবু পাপড়ের ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন স্বাতী। তিনি বাজার সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন। তিনি জানতেন মানুষ কি চায়। এটাও জানা ছিল যে এই ব্যবসা সবসময় লাভজনক হবে। তিনি ২ মহিলার সাথে উড়দ এবং শাবু পাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, স্বাতী তাদের পাপড় তৈরি করা শিখিয়েছিলেন।

    এরপর স্বাতীর গোষ্ঠী কেরলে যায়। সেখানে বিভিন্ন রাজ্যের স্টল ছিল। স্বাতী ও আরও ৫ জন মহিলা সেখানে একটি খাবারের স্টল শুরু করেন। দুই দিন সেখানে কেউ ঢুঁও মারেনই। স্বাতী তখন আন্দাজ করেন যে, সেখানকার মানুষের ঝোঁক ননভেজের দিকে বেশি। এরপর তিনি কোলহাপুরি গ্রেভি এবং মাটন স্টল শুরু করেন। সেই স্টল থেকে ৮ দিনে তিনি আয় করেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কেরল থেকে ফিরে আসার পর স্বাতী তার বন্ধু রোহিণীর সঙ্গে স্বদেশী বিপণন সংস্থা শুরু করেন।

    স্বদেশী মার্কেটিং কোম্পানি শুধুমাত্র স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছ থেকে পণ্য কেনে৷ সেই আইটেমগুলিকে বারসি, সোলাপুর, মুম্বাই, পুনেতে পাঠানো হয়। অনেক মহিলা এখন স্বাতীর মাধ্যমে বাড়ি থেকে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন৷ স্বাতী বলেন, নারীরা যদি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন, তাহলে নিজের ব্যবসা চালিয়ে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। স্বাতী যিনি ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলেন, এখন তিনি প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন৷ এ ছাড়া তার পুরো ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার লাখে।