Fri. Mar 31st, 2023

    একটা ছেলে যে ১০ বিশ টাকার জন্য লড়াই করত সে এখন বছরে ২ কোটি টাকার ব্যবসা করছে। এই যুবক পুনে জেলার ইন্দাপুর তালুকের ছোট্ট গ্রাম লাখেওয়াড়ির বাসিন্দা ধনঞ্জয় নারওয়াদে। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ধনঞ্জয়ের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে। ধনঞ্জয়ের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকলেও পড়তে পছন্দ করতেন না। সে শুধু খেলতে ভালোবাসতেন। সে ভালো নম্বর পেয়ে দশম শ্রেণি পাশও করেছিল। এরপর তার বাবা-মা শিরুরে একটি রুম ভাড়া নেন যাতে সে ভালো শিক্ষা লাভ করতে পারে। কোনোরকমে ধনঞ্জয় সেখানে দ্বাদশ পাশ করেন। এরপর সে পুনেতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়।

    বাবা করতেন মাত্র ৮-১০ হাজার টাকার চাকরি। মামা প্রথম বছরে ১ লাখ ফি দিয়ে সাহায্য করেন। পরে তার কাকা তাকে সাহায্য করেন। বাবা মাসে ৪-৫ হাজার পাঠাতেন। তা থেকে ধনঞ্জয় রুম ভাড়া ও খাবার খরচ বহন করতেন। কলেজে সে কিছুই বুঝত না। প্রথম বর্ষে ৬টি বিষয়ের মধ্যে ৫টিতেই অকৃতকার্য হয়। এরপর সে গ্রামে ফিরে আসেন। সেখানে তার কাকা তাকে তার ব্যবসায় কাজ করতে বলেন। কিন্তু পুনের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যান ধনঞ্জয়। এক কাকা ঠিকাদার ছিলেন, সেখানে তাকে নির্মাণকাজে ৫-৬ মাস কাজ করতে হয়েছে।

    এ ধরনের কাজ করে ধনঞ্জয় শিক্ষার মূল্য উপলব্ধি করেন। তিনি আবার পুনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক বন্ধুর সঙ্গে প্যান্টিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সেখানে ক্ষতির মুখে পড়ে সে। এরপর সবাই বলে সে আর কিছুই করতে পারবে না। এরমকম মন্তব্যে মন ভেঙে যায় ধনঞ্জয়ের। ধনঞ্জয়ের জামাকাপড় নিয়ে খুব শৌখিন ছিল। বন্ধুরা তাকে জামাকাপড় কেনার জন্য নিয়ে যেত। এরপর সে নিজের দোকান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। বাবা দেড় লাখ টাকা সাহায্য করেছেন। আর সে সুদেও টাকা নিয়েছিলেন।

    তিনি ১০ বাই ১২ এর একটি দোকান ভাড়া দিয়ে কাজ শুরু করেন। অভিভাবকরা এসব করতে না করত। তাঁরা বলতেন, এখানে অনেক বড় মাড়োয়ারি দোকান আছে, তোমার ছোট দোকানে কে আসবে? কেন টাকা অপচয় করবে? এরপর তাঁর বাবা সাহায্য করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক বন্ধুর সহায়তায় সে তাঁর দোকান চালাত। দোকানে কেনাকাটা না থাকা তাঁর সেই পার্টনার দোকান ছেড়ে চলে যায়। তবে, ধনঞ্জয়ও হারবার পাত্র ছিল না। সে সেই কাজ চালিয়ে যাবে বলে মন ঠিক করে নেয়।

    সে বাজার ঘুরে দেখে। সে বুঝতে পারে যে, ৩০০ টাকার জামা ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর সে সিদ্ধান্ত নেয় যে গ্রাহকদের লুঠ না করে সে তাদের কমদামে পোশাক দেবে। সে সেই ৩০০ টাকার জামা ৫০০ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ধীরে ধীরে কম দাম পেয়ে তাঁর দোকানে সবাই আসা শুরু করে।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে যে, ধনঞ্জয় কম দামে ভালো পোশাক বিক্রি করছে। এরপর তাঁর দোকানে আরও খরিদ্দার বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। এরপর সে ধীরে ধীরে একটি দোকানেই আবদ্ধ না থেকে আর কয়েকটি দোকান খোলে।

    একটি ছোট দোকান থেকে শুরু করে আজ ২০টি দোকানের মালিক ধনঞ্জয়। এরপর সে নিজের ব্র্যান্ড বানানো শুরু করে। সেখানে তাঁর লাভও বেশি হয়, কারণ পোশাক নিজেই বানাত। এমনকি সে নিজেই ডিজাইন করত।

    বর্তমানে ধনঞ্জয় বহু মানুষকে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ফেল করা ২৫ বছরের ছেলেটি আজ বড় ব্যবসায়ী। এক সময় গাড়িতে পেট্রোল ভরার টাকা ছিল না তাঁর, বর্তমানে সে কোটি টাকার মালিক আর তাঁর নিজস্ব পোশাকের ব্র্যান্ডও রয়েছে।