বর্তমান যুগে সব অভিভাবকই তাদের সন্তানদের বলেন যে, পড়ালেখা করলেই আগামী দিনে বড় হতে পারবে। স্কুল-কলেজে ভালো কিছু করতে না পারলে, জীবনে কিছুই করতে পারবে না। মুম্বইয়ের এক যুবক তা ভুল প্রমাণ করে দেখিয়েছে। এই যুবক সাফল্যের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আজ আমরা তৃষ্ণিত অরোরা সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি, যিনি পড়াশোনা করতে একেবারেই পছন্দ করেন না। তৃষ্ণিতের পরিবার তাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। আজকাল তৃষ্ণিত অরোরা সাইবার নিরাপত্তায় অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। সে ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার পছন্দ করত, প্রায়ই তার কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলতেন। আর তাঁর পরিবার এই নিয়ে খুব চিন্তিতও ছিল।
তৃষ্ণিত’র বাবা কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড বদলে দিতেন। কিন্তু তৃষ্ণিত কম্পিউটারে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, তিনি কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে গেম খেলা শুরু করতেন। এসব দেখে তার বাবা তার প্রতি খুবই মুগ্ধ হয়ে তার জন্য একটি নতুন কম্পিউটার নিয়ে আসেন এবং ভালো কিছু শিখতে বলেন।
এখন সমস্যা হল তৃষ্ণিত অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করেছিল, সে কম্পিউটারকে এত ভালবাসত যে সে সারাক্ষণ সেঁতা নিয়েই পড়ে থাকত আর অন্য বিষয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল না। এরপর তার বাবা তখন তাকে কম্পিউটার নিয়ে কিছু করতে চায় কিনা সেটা জিজ্ঞাসা করেন।
১৯ বছর বয়সে কম্পিউটার ফিক্সিং এবং সফ্টওয়্যার ক্লিনিং করা শিখেছিলেন তৃষ্ণিত। এরপর ছোট ছোট প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। তৃষ্ণিত এতটাই কম্পিউটার দক্ষ হয়েছিলেন যে, তিনি কম্পিউটার সম্পর্কিত অনেক কাজ শুরু করেছিলেন এবং এর কারণে তিনি ছোট কাজ পেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল আরও বড় হওয়ার, তাই সে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন এবং কম্পিউটার সম্পর্কে আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করে।
বর্তমানে তৃষ্ণিত একজন এথিক্যাল হ্যাকার। এথিক্যাল হ্যাকিং এর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক বা সিস্টেম অবকাঠামোর নিরাপত্তা মূল্যায়ন জড়িত। হ্যাকিংয়ে, নেটওয়ার্ক বা সিস্টেম অবকাঠামোর নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হয়। যাতে কেউ নেটওয়ার্ক বা সিস্টেম অবকাঠামোর নিরাপত্তা লঙ্ঘন করতে না পারে, গোপন তথ্য চুরি করতে না পারে বা ভাইরাস বা অন্যান্য উপায়ে ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখে সার্টিফাইড হ্যাকাররা ।
তারপরে ২৩ বছর বয়সে তৃষ্ণিত রিলায়েন্স, SBI, অ্যাভন সাইকেলের মতো ভারতের বড় কোম্পানির ক্লায়েন্ট হয়ে ওঠেন। বর্তমানে ভারতে তাঁর ৪টি অফিস রয়েছে এবং সম্প্রতি সে দুবাইতেও একটি অফিস খুলেছে। এমনকি আম্বানিরাও তাঁর কাছ থেকে সাইবার পরিষেবা নিচ্ছে এবং তারাও তৃষ্ণিতের গ্রাহক। তৃষ্ণিত বলেন, আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই আমি কম্পিউটার এবং এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলাম।
তৃষ্ণিত টিএসি সিকিউরিটি নামে একটি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি শুরু করেন। তৃষ্ণিত অরোরা TAC সিকিউরিটি সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স নামে একটি কোম্পানির মালিক, যার বর্তমানে মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। তৃষ্ণিত Hacking Talk with Trishneet Arora, The Hacking Era এবং Hacking with Smart Phones এর মত বইও লিখেছেন।