শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। কাজ করতেন অন্যের লেদ কারখানায়। এখন তাঁর ৪টি কারখানা। সেখানে প্রকৌশলী-কর্মকর্তা-শ্রমিক মিলিয়ে ৪০০ জন কাজ করছেন। সবচেয়ে বড় কথা, সাশ্রয়ী দামের কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সুবাদে ‘কৃষকবন্ধু’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। একসময় অন্যের কারখানায় কাজ করা শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা এই মানুষটার নাম আজিজার রহমান মিলটন।
আজিজার রহমান বলেন, ‘নিজের পরিশ্রম আর চেষ্টায় এত দূর এসেছি, সহায়-সম্পত্তি ও বাড়ি-গাড়ি করেছি। আবার কৃষি ও কৃষকের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দেও বুকটা ভরে ওঠে।’ বর্তমানে আজিজারের ৪টি বড় কারখানা ছাড়াও ৭৭ শতক জায়গার ওপর দুটি গুদাম, শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গা, নিজস্ব ট্রাক, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। সব মিলিয়ে আজিজার এখন কোটিপতি ব্যবসায়ী।
সংগ্রামের শুরু: ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করে বাবার সঙ্গে কারখানার শ্রমিক হয়ে গেলেন আজিজার। একসময় যন্ত্রাংশ মেরামতে হাত পাকল। বয়সেও খানিক পরিণত হলেন। সেই সঙ্গে অদম্য ইচ্ছা তো আছেই। ফলে একদিন নিজেরই একটা লেদ যন্ত্র বসানোর ভাবনা তাঁর মাথায় ঢোকে। ব্যস, বাড়িতে এসেই নিজের ইচ্ছার কথা মাকে জানালেন।
তাতে খুশি হয়ে মা তাঁর শেষ সম্বল গয়না বেচে কিছু টাকা দিলেন। এক বোনও দিলেন তাঁর জমানো কিছু টাকা। এভাবে ১৯৮৯ সালে ৩০ হাজার টাকায় লেদ যন্ত্র কিনে বগুড়া শহরের রেলওয়ে মার্কেটে কারখানা খুললেন। সারা দিন অন্যের কারখানায় কাজ করে ফেরার পর মধ্যরাত অবধি কাজ করতেন নিজের কারখানায়।
পরের বছর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরো মনোযোগ দিলেন নিজের কারখানায়। মেরামতের কাজ বাদ দিয়ে ভাবলেন নিজেই কিছু তৈরি করার কথা। তখন থেকে শুরু হলো তাঁর উৎপাদনমুখী শিল্পের যাত্রা। ১৯৯০ সালে বিসিক থেকে ক্ষুদ্র প্রকৌশল ঋণ হিসেবে একটা আধুনিক লেদ ও ড্রিল যন্ত্র পেলেন, সঙ্গে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ঝুঁকি নিয়ে তিনি লেদে সেচযন্ত্রের পাম্প তৈরিতে লেগে গেলেন। নাম দিলেন ‘মিলটন পাম্প’।
দিনে একটা করে পাম্প বানাতে পারতেন। খরচ পড়ত তিন হাজার টাকা। বেচতেন দুই হাজার টাকা লাভে। প্রথম থেকেই ফাটাফাটি বাজার পেল তাঁর পাম্প। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় বিসিকে প্লট নিয়ে পাম্প তৈরির আধুনিক কারখানা করেন আজিজার। ২০০৩ সালে প্রায় দুই কোটি টাকায় বগুড়ার রুগ্ণ ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শিল্প ‘ফিরোজ মেটাল ওয়ার্কস’ কিনে চালু করেন।
এই কারখানায় দিনে বর্তমানে ৪০০ টিউবওয়েল তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার রকমের কৃষি ও হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে দেশে বাজার পাওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে ভারতে পাম্প রপ্তানি শুরু করেন আজিজার। করোনার কারণে অন্যান্য দেশে রপ্তানি এখন বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এখন ভারতের বাজারে পানির পাম্প ও কৃষি যন্ত্রাংশ রপ্তানি করছি।’ তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।