Wed. May 24th, 2023

    …………………………

    নারী চেষ্টা করলে কি না পারে! সম্ভাবনার এই যুগে নারীর পথচলা আরও সুগম হয়েছে। প্রবল আগ্রহ, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর নিজে কিছু করার তাগিদে স্বল্প পুঁজিতে হস্তশিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আইরিন হেনা। ছাত্রজীবন থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। মফস্বলে থাকায় এই পথচলা খুব মসৃণ ছিল না।

    একটা সময় ঢাকায় চলে আসেন আইরিন হেনা। এসে বাড়তে থাকে তার স্বপ্নও। সেই স্বপ্নের দিকে এগোতে থাকেন। করোনার অবসর কাজে লাগাতে দেশের অসংখ্য নারী ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। অন্যান্য ব্যবসার মতো                                                                  সফলতা হাতছানি দিচ্ছে এসব নারীকে। দেশে অনলাইন ব্যবসা চালু হওয়ায় মানুষকে কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। এই মাধ্যমে সফলতা পেয়ে ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তারা। আইরিন হেনাও তাদের একজন।

    …………………………

    নিজের জমানো অল্প কিছু টাকা আর কিছু ধার নিয়ে ২০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালে শুরু হয় তার ব্যবসা। ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে থাকে। দিন গড়িয়ে সেই ৪৬ হাজার টাকা এখন ১২ লাখে উন্নীত হয়েছে। অফলাইন-অনলাইন সবখানেই পেয়েছে তার পরিচিতি। তিনি মনে করেন, আর্থিক ও মানসিক দৃঢ়তাই হচ্ছে নারীর শক্তি। তাই নিজে সফলতার পাশাপাশি মাধ্যম হয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সমাজের অন্য নারীদের।

    ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে আইরিন হেনা বলেন, স্বাবলম্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রথম দিকের শুরুটা                                                      স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ ছিল না। বিয়ের বছরখানেক পরেই আমার স্বামী ও আমি দুজনে মিলে মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে ড্রেস কিনি। তবে আগ্রহের ব্যাপার হলো ৪ দিনের মাথায় সব বিক্রি হয়ে যায়। সেই টাকা দিয়ে আবার নতুন ড্রেস কিনি সেগুলোও মাত্র সপ্তাহের ভেতরে বিক্রি হয়ে যায়। সেই ভালো লাগা থেকেই আত্মবিশ্বাস জাগে, যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা নিয়েই সামনে এগোতে পারবো। সেখান থেকেই চেষ্টায় আজকের ‘হেনা হ্যান্ডিক্রাফট’।

    …………………………

    শুধু আর্থিক দিকেই নয় পরিচিতও পেয়েছি বেশ। পারিবারিক কোনো বাঁধা ছিল কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারিবারিক জয়ের যে বন্ধন, সেই চড়াই-উতরাই পার করেই আমি এতদূর এসেছি। আমার স্বামী আমাকে অনেক সাহায্য করে। আমার ৪ বছরের মেয়ে নিয়ে কাজগুলো করতে                                                 আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করে। তাছাড়া আমার পণ্যগুলো সারাদেশে পৌঁছাতে, কাপড় কেনা থেকে সব ধরনের সাহায্য আমার পরিবার আমাকে করে। হেনা হ্যান্ডিক্রাফট অফলাইনে বেশি জনপ্রিয়। এখানে রয়েছে মেয়েদের হাতের কাজের ড্রেস (থ্রি পিছ, ওয়ান পিছ, টু পিছ), কোটি, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ বাচ্চাদের আইটেম, হাতের কাজের কোশন কাভার, বেড কাভার, কাঁথা ইত্যাদি। মূলত হাতের কাজের ড্রেসগুলো নিয়েই হেনা হস্তশিল্পের পথচলা।

    হাতের কাজের পোশাকের চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাতের তৈরি সব পণ্যই ক্রেতাপ্রিয়। এর চাহিদা সারাবছরই। তবে, মূলত উৎসব আমেজে অর্ডার বেশি পেয়ে থাকি। এছাড়া সারাবছরই টুকিটাকি ড্রেস বিক্রি করে থাকি। আমি যেহেতু অনলাইন ব্যবসায়                                                    নতুন, তাই একটু বেগ পেতে হচ্ছে। আগে ৫ বছর যাবৎ অফলাইনে করে এসেছি। করোনাকালে আমি সবচেয়ে বেশি ড্রেস বিক্রি করতে পেরেছি।

    …………………………

    পারিপার্শ্বিক বাঁধা তাকে কখনো দমাতে পারেনি, ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে চলছেন। তিনি বলেন, ব্যবসার শুরুতে যখন অফলাইনে বেচা-কেনা ছিল, অনেকে অনেক ধরনের অবহেলা, তুচ্ছ করা, কোনো একটা অফিসে গিয়েছি, সেখানে উপরে উঠতে না দেওয়া, এখানে ড্রেস দেখানো যাবে না। নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবুও থেমে নেই আমার স্বপ্ন।
    ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, আমি যেন মানুষকে                                                       সব সময় ভালো পণ্য দিয়ে আসতে পারি। আমার যাত্রা যেহেতু অফলাইনে, তবে মানুষ দিনকে দিন অসুস্থ হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে যায়। তখন হয়তো এমন পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। তাই অনলাইনেও আমার পরিচিতি ও ব্যবসা বাড়াতে একটি মার্কেট প্লেস তৈরি করেছি, ভালো হচ্ছে ব্যবসা।

    অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকায় একটি হস্তশিল্পের দোকান দেবো। আমি ট্রেড লাইসেন্সও করার চেষ্টা করছি অনলাইন ব্যবসার পরিচয় দিয়ে। অনেকের স্বপ্নের শোরুমকে দুঃস্বপ্ন হতে দেখেছি। তাই ওয়েবসাইট খুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাতের কাজের শাড়ি, ওয়ান-পিস, টু-পিস,                                       থ্রি-পিস ছড়িয়ে দিতে চাই। এতে আমার স্বপ্নও ছড়িয়ে যাবে।
    প্রায় শূন্য থেকে এখন তিনি লাখপতি। তার এসব সফলতার পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, আনন্দ ও সুখের অনেক কাব্য। করোনার ধাক্কা কেটে গেলে নতুন উদ্যোমে আরও ভালো করবেন। তিনি চান, তার কাজের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হোক।
    তথ্যসুত্রঃ রাইজিংবিডি.কম (প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১)