Wed. Sep 20th, 2023

    …………………………

    ২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার পর একের পর এক দায়িত্ব আসে সুন্দর পিচাইয়ের কাঁধে। তিনিও এগিয়ে যেতে থাকেন। এখন তিনি গুগল এবং এর মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা, ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন ২০১৯-এর ডিসেম্বরে ঘোষণা দেন, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হবেন সুন্দর পিচাই। আর তাঁরা দুজনই সরে দাঁড়াবেন নেতৃত্ব থেকে।
    ………
    সে সময় ল্যারি পেজ ছিলেন অ্যালফাবেটের সিইও, সের্গেই ব্রিন প্রেসিডেন্ট। আর অ্যালফাবেটের মূল ব্যবসা, অর্থাৎ গুগল সার্চ ইঞ্জিনের গুরুভার ছিল সুন্দর পিচাইয়ের কাঁধে। এরপর তাঁকে গুগলের তো বটেই, সার্বিকভাবে অ্যালফাবেটের সিইওর পদে আনা হয়। কে এই পিচাই, তা এখন আমরা সবাই জানি। তবে কীভাবে তিনি বিশ্বের সফলতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটির শীর্ষে পৌঁছালেন, চলুন তা জানা যাক।

    …………………………

    শৈশবে সংখ্যা মনে রাখায় দক্ষ ছিলেন

    সুন্দর পিচাইয়ের মূল নাম পিচাই সুন্দরারাজন। বড় হয়েছেন ভারতের চেন্নাইয়ে।

    পিচাইয়ের বাবা রঘুনাথ তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন, মা লক্ষ্মী ছিলেন স্টেনোগ্রাফার। উচ্চবিত্ত পরিবার ছিল না তাঁদের। ছোটবেলায় দুই ঘরের অ্যাপার্টমেন্টের বসার ঘরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমাতেন সুন্দর।

    শৈশবে সংখ্যা মনে রাখায় বিশেষ দক্ষ ছিলেন পিচাই। ব্যাপারটি তাঁর বাবা-মা বুঝতে পারেন, যখন দেখলেন তাঁদের রোটারি ফোনে ডায়াল করার সব নম্বর পিচাইয়ের মুখস্থ। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিচাই এখনো মাঝেমধ্যে মিটিংয়ে তাঁর সেই দক্ষতার প্রমাণ দেন।

    ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) খড়গপুর থেকে মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন তিনি। এরপর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান।

    একসময় সিলিকন ভ্যালি ছিল তাঁর স্বপ্ন
    তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন পিচাই। প্রথম প্রোগ্রাম হিসেবে তৈরি করেন দাবা খেলার সফটওয়্যার। ভারতের দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে পিচাই বলেছিলেন, ‘প্রযুক্তি আমার সব সময়ের পছন্দের বিষয় ছিল। আর সিলিকন ভ্যালি ছিল আমার স্বপ্ন, আমি এ নিয়ে লেখা পড়তাম, চাচার কাছ থেকে শুনতাম।

    …………………………

    ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান সুন্দর পিচাই। স্ট্যানফোর্ড থেকে এমএস শেষে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্টন স্কুলে এমবিএ করেন। গুগলে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস এবং ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করেছেন।

    গুগলের মূল কার্যালয় গুগলপ্লেক্সে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। এপ্রিল ফুলের সেই দিনেই জি–মেইল চালু করে গুগল। পিচাইসহ সবাই ভেবেছিলেন বিনা মূল্যের ই-মেইল সেবাটি নিশ্চয় মজা করার জন্য করা।

    গুগলের সার্চ টুলবার দিয়ে শুরু হয় পিচাইয়ের কাজ। তবে ২০০৬ সালে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মাইক্রোসফট। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজে ওয়েব ব্রাউজার ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’–এর ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ‘বিং’ ঠিক করে দেয় মাইক্রোসফট।

    পিচাই সে সময় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁদের বিক্রি করা কম্পিউটারে গুগলের সার্চ টুলবার যুক্ত করার ব্যাপারে বোঝাতে সক্ষম হন। মাইক্রোসফটের সে উদ্যোগে যে ক্ষতির মুখে পড়েছিল গুগল, পিচাইয়ের কাজে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

    ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ফাঁড়াটি পিচাইয়ের জীবনে আশীর্বাদ হয়েই আসে। সে সময় গুগলের নিজস্ব ওয়েব ব্রাউজার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনকে রাজি করাতে সক্ষম হন তিনি। ফলাফল? ক্রোম এখন বিশ্বের জনপ্রিয়তম ব্রাউজার।

    …………………………