




…………………………





চাকরি সে তো সোনার হরিণ। হাতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আর সেই সুভাগ্যের চাবিটি পেয়েছেন একজন স্বপ্নবাজ নারী। তিনি তার মেধা আর যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। চাকরি পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন একান্ত আপন মনে। ওই স্বপ্নবাজ নারীর নাম তানজিনা আক্তার চৌধুরী। তিনি দশম জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নারীদের যোগ্যতার আবারও প্রমাণ রাখলেন। বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম জজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।
…….
ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলাম বিতর্কের সঙ্গে। সেই সম্পর্কটি আরো দৃঢ় হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে। প্রথম বর্ষ থেকেই মুটিং (আদালতের শুনানির আদলে বিতর্ক) শুরু করি, এটি খুব কাজে লেগেছে। মুটিং করতে নেপালও গিয়েছি। কোর্স করেছি মানবাধিকার কমিশনের সামার স্কুলে। এসব দশম জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে টেকার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বলে আমার ধারণা। আইনে স্নাতক শেষ করার পরই সিনিয়র একজন আইনজীবীর অধীনে কিছুদিন কাজ করি। মামলা নিয়ে অধ্যয়ন করা, ফাইল নিয়ে ছোটাছুটি—সবই





…………………………





ঠিক ছিল। কিন্তু কোথায় যেন একটি অভাব লক্ষ করলাম। বুঝলাম এখনো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। পুরোদমে শুরু করে দিলাম জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি। একপর্যায়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম। শুধু নামাজ আর গোসলের সময়টুকু বাদে বই নিয়েই থাকতাম। কখনো পাবলিক লাইব্রেরি, কখনো অন্য কোনো লাইব্রেরিতে ছুটেছি। মনের জোর থাকলে সব কিছুই সম্ভব—এই আত্মবিশ্বাস আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে দেয়নি। শেষের দিকে এসে কোর্টে তেমন একটা যাইনি। শুধু জুডিশিয়ারি পরীক্ষার জন্যই পড়াশোনা করেছি। গ্রুপ করে পড়তাম। তিন-চারজন বন্ধু মিলে একটি বিষয় নিয়ে পড়তাম বলে দ্রুত বিষয়গুলো মাথায় ঢুকে যেত।
কেউ কোনো বিষয় না বুঝলে অন্যরা বুঝিয়ে দিত। এতে প্রস্তুতিটা আমাদের জন্য সহজও হয়ে গিয়েছিল। জুডিশিয়ারির সিলেবাস বেশ বড়। শুধু আইনের বিষয়গুলো পড়লেই চলে না। সঙ্গে পড়তে হয় আরো চারটি বিষয়—বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। নিয়মিত সাধারণ জ্ঞান ও গণিত প্র্যাকটিস করতাম। বাংলা ও ইংরেজিও সমান গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি আইনের বিষয়গুলো তো ছিলই। আইন জানতে হয়েছে প্রচুর। বিশেষ করে প্রধান আইনগুলো বুঝে, বিশ্লেষণ করে পড়তে হয়েছে। জানতে হয়েছে আইনের ব্যবহার, গুরুত্বপূর্ণ





…………………………





ধারা ও আইনের ব্যাখ্যা। প্রস্তুতির বেলায় একটি জিনিস মেনে চলেছি—কালকের জন্য কোনো পড়া ফেলে রাখতাম না। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো ছিল। সঙ্গে চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে পেয়েছি অনেক উত্সাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বড় ভাইয়েরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সব সময় নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করেছি। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করেছি। আগে যারা জুডিশিয়ারি দিয়েছে তাদেরও পরামর্শ নিয়েছি।
আইনের মূল বইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন লেখকের বইও পড়তাম। প্রতিটি আইনের গঠনমূলক ব্যাখ্যা শিখেছি। জুডিশিয়ারির প্রিলি পরীক্ষার সময় অনুভব করেছি গ্রুপে পড়াশোনা করলে কতটা সুবিধা পাওয়া যায়। প্রিলিতে খুব অল্প সময়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সময় যেহেতু অল্প আবার ভুল উত্তরের জন্য রয়েছে নেগেটিভ নম্বর, তাই সতর্কতার সঙ্গে উত্তর দিতে হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষায়





…………………………





বিস্তারিত লেখার অভ্যাস ছিল। লিখিত পরীক্ষায় এটি বেশ কাজে দিয়েছে। হয়েছে উল্টোটাও। জুডিশিয়ারিতে প্রথম প্রশ্নগুলোর উত্তরে বিশদ আলোচনা করতে গিয়ে শেষের দুটি প্রশ্ন ভালোভাবে দিতে পারিনি। ভাইভা দেওয়ার সময় ছিলাম ফুরফুরে মেজাজে। প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় টিকে মনোবল বেড়ে গিয়েছিল। মুটিং এবং বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভাইভায় গুছিয়ে কথা বলার কৌশলটি রপ্ত ছিল। তার পরও একটু ভয় পাচ্ছিলাম। তবে সেই ভয়কে জয় করেছি মনের জোর দিয়ে।
আমাকে প্রশ্ন করে কনফিউজ করার চেষ্টা ছিল বোর্ডের সদস্যদের। বলেছি, আমি এটিই জানি। আইন কী, কেন পড়েছি, কেন জজ হতে চাই—এসবের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো সমাধান করতে বলেছেন। আমি আইনের ধারার সঙ্গে তার ব্যবহারবিধিও তুলে ধরেছি। তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। পরে জুডিশিয়ারিতে সহকারী জজ হিসেবে টিকে যাওয়ার সংবাদ শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। একথা আদৌ তিনি ভুলতে পারবেন না জানিয়েছেন।