




…………………………





জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি ফিরেছে সুন্দরবনে। এ উপলক্ষে সম্প্রতি পালিত হয়েছে সরকারঘোষিত ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস’। একসময় দস্যু-ডাকাতদের ভয়ে কাঁপতে থাকা সুন্দরবনকে শান্তির জনপদে রূপান্তরে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। এজন্য সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন সম্মাননাও।
…….
মোহসীন-উল হাকিম সুন্দরবনে তার পেশাগত দায়িত্বপালন, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠা, সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতাসহ প্রায় এক যুগের রোমাঞ্চকর পথচলার কথা বলেছেন জাগো নিউজকে। সুন্দরবনেই তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।





…………………………





জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের পেছনের কথা বলুন।
মোহসীন-উল হাকিম: ২০০৯ সালের কথা। তখন ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রতিবেদন করতে আমি যাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সাতক্ষীরার গাবুরায়। সেখানে গিয়ে আমি প্রথম বুঝতে পারলাম সুন্দরবনকেন্দ্রিক জলদস্যুদের কাছে কতটা অসহায় ওই এলাকার মানুষ। কতটা আতঙ্কে থাকেন এই জনপদের মানুষ। তাদের এই সমস্যা গণমাধ্যমে সেভাবে আসে না। তারা আমাকে পেয়ে বলেন, ‘ভাই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু দস্যুদের তো ঠেকাতে পারবো না। আমাদের বাঁচান। পারলে দস্যুদের ঠেকাতে কিছু করুন।’
তাদের সেই কথা মনে নাড়া দেয়। কিছু একটা করার উদ্যোগী হই। মনে করলাম জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলি, সমাধান কোথায় তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। দস্যুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমি সামধান খুঁজে পেলাম। তখন মোতালেব ছিলেন পশ্চিম সুন্দরবনের একজন দস্যু নেতা। মোতালেবের মোবাইল নম্বর যোগাড় করলাম। স্থানীয় সাংবাদিক বাপ্পী ভাই ছিলেন সঙ্গে। তার মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। দস্যু নেতা মোতালেবের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, তারাও ভালো নেই। ভালো না থাকলে দস্যুতা কেন করছেন জানতে চাইলে মোতালেব বলেন, তাদের উপায় নেই, বাড়ি ফিরলে ক্রসফায়ারে মারা পড়তে পারেন।
এভাবে যোগাযোগ গড়ে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, ঘুরে বেড়িয়েছি দস্যুদের সঙ্গে। তাদের আস্তানায়, তাদের ডেরায় কাটিয়েছি দিনের পর দিন। তাদের নৌযানে করে সুন্দরবনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটেছি। একবার কোস্টগার্ডের গুলির মুখেও পড়তে হয়েছে। তবে আমি কখনোই ভুলে যাইনি নিজের পেশাদারিত্ব। ভুলে যাইনি আমি যে একজন সাংবাদিক। সব সময় আমার মাথায় কাজ করেছে গাবুরার মানুষের করুণ আবেদন—‘ভাই আমাদের জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচান।’





…………………………





২০০৯ সালের পর থেকে ১০০ বারের বেশি সুন্দরবনে গেছি। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের জন্য কাজ করতে করতে আমি বুঝলাম সুন্দরবনের বিস্তৃতি ও গহীনতা এতো বেশি। এখানে আভিযানিক কোনো কার্যক্রম চালাতে হলে বিশেষায়িত বাহিনী ছাড়া সম্ভব নয়। যদিও পরে র্যাবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কাজ করেছে। তারা অনেক অভিযানও পরিচালনা করেছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে শুধু অভিযান দিয়ে সুদূর ভবিষ্যতের জন্য সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ আমি দেখেছি একটি দস্যু বাহিনীর সঙ্গে র্যাব, পুলিশ কিংবা কোস্টগার্ডের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে দস্যু বাহিনীর দলনেতা মারা গেছে। কিন্তু বাকি যে সদস্য ও অস্ত্রগুলো থেকে গেলো, সেখান থেকেই বাহিনীটি আবার মাথাচাড়া দিতে পারে। তাই সহজ উপায় হচ্ছে আত্মসমর্পণ। তারা যদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র-গুলিগুলো জমা দেবে না।
দস্যুদের আত্মসমর্পণের ব্যাপারে আপনার কথায় সরকার রাজি হলো কীভাবে?
মোহসীন-উল হাকিম: দস্যুদের আত্মসমর্পণের ব্যাপারে ২০১১-১২ সালে আমি প্রথম দফায় সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সাড়া মিলছিল না। ২০১৪ সালে আরেক দফায় চেষ্টা চললো, সাড়া মেলেনি তখনো। এরপর ২০১৫ সালের শেষের দিকে যখন চেষ্টা করলাম, তখন সরকার রাজি হয়। প্রথম দিকে সরকার রাজি না হলেও আমি হাল ছেড়ে দেইনি, লেগে ছিলাম। ভেবেছিলাম সরকারকে বোঝাতে পারিনি। তাই আমি কখনো ধৈর্য্যহারা হইনি। আমি জানতাম অস্ত্র-গুলিগুলো জমা না দেওয়া পর্যন্ত দস্যুতার সমাধান হবে না। কারণ আমি জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম এটাই সমাধানের পথ। এর মধ্যে জলদস্যুদের নিজেদের মধ্যে গুলিবিনিময়ে কেউ কেউ মারা যাচ্ছে, কেউ পালিয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে, কেউ ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে, আবার কখনো কখনো দস্যুনেতা বদল হচ্ছে। এ সময়টায় আমি ভীষণ সমস্যায় পড়ি। কারণ অনেক চেষ্টার পর একজনকে ঠিক করি, তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করি। এর কদিন পরে দেখি সে নেই (মারা যায়)।
একটা সময় বুঝেছি দস্যুরা ছাড়া তাদের আশেপাশের কেউই চায় না তারা দস্যুতা থেকে ফিরে আসুক। কারণ দস্যুদের বনের মধ্যে রেখে আশেপাশের অনেকের আয়-রোজগার হচ্ছিল। এজন্য বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি, দস্যুদেরও বোঝাতে সমস্যা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা বুঝেছে এবং একে একে সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন।





…………………………





প্রথম জলদস্যু আত্মসমর্পণের অনুভূতি কেমন ছিল?
মোহসীন-উল হাকিম: সুন্দরবনে বেশ কিছু বাহিনী খুব বড় ও প্রভাবশালী ছিল। এর মধ্যে ইলিয়াস বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, নোয়া মিয়া বাহিনী উল্লেখযোগ্য। যোগাযোগ করলেও এরা জানালো, কেউ আত্মসমর্পণ করবে না। নোয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন কাদের মাস্টার। ২০০৯ সাল থেকে কাদের মাস্টার যখন রাজু বাহিনীর সঙ্গে দস্যুতা করতেন, সেই সময় থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। পরে তিনি নোয়া বাহিনীতে যুক্ত হন। কাদের মাস্টার ভালো হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, আমি তাকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কাদের মাস্টারের মতো এমন আরও অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ চলছিল। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম একেবারে নিবিড়ভাবে।
কিছুদিন পর কাদের মাস্টার আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, তিনি আত্মসমর্পণ করবেন, তবে এখনই না, কদিন পর ফোন করে বলবেন। তিনি যে নোয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন, তাদের মধ্যে ছয়জন আত্মসমর্পণ করবেন, কিন্তু বাকিরা আত্মসমর্পণ করবেন না। এরপর গুলিবিনিময় করে বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে নেন কাদের মাস্টার। তিনি নেতৃত্বে আসার পর আমাকে ফোন করে বললেন তিনি ও তার বাহিনী আত্মসমর্পণ করবেন। এই বাহিনী আত্মসমর্পণ করে যখন ২২ লাখ টাকা আমাকে উপঢৌকন হিসেবে দিতে চায় তখন আমি প্রত্যাখ্যান করি। এই খবর চারপাশে ছড়িয়ে যায়। এরপর একে একে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করতে থাকে।
সুন্দরবনে যারা দস্যুতা করেছে ওটা আসলে কোনো জীবন নয়। আমি দস্যুদের বলেছিলাম—অন্তত জেলখানায় গিয়ে হলেও তোমরা নিশ্চিতে থাকবে, কিন্তু সুন্দরবনে তোমাদের জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই। জামিন নিয়ে বাড়িতে থাকবে, মামলা লড়বে, কাজ করবে এবং একটি সুন্দর জীবন যাপন করবে। তারা সেই জায়গাটিতে আমার কথায় রাজি হয়েছিল।
২০১৬ সালের জুন মাসে মাস্টার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে জেলখানায় যাওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে এখন স্বাভাবিক জীবনে। তারা বাড়িতে বসবাস করছে। র্যাব তাদের দেখভাল করছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাদের পুনর্বাসনের জন্য এক লাখ করে টাকা দিয়েছেন। তাদের আত্মসমর্পণ ও পরবর্তী প্রক্রিয়া মিলে এমন একটি আবহ তৈরি হলো যে, সুন্দরবনের সব জলদস্যুর মাথায় একটি চিন্তায় ঢুকলো, তারাও আত্মসমর্পণ করবে।





…………………………





রাজধানী ঢাকার দীর্ঘদিনের জীবন ছেড়ে সুন্দরবনে দিনের পর দিন কীভাবে থেকেছেন?
মোহসীন-উল হাকিম: প্রথমদিকে আমি পারিনি। কষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমার দুই দিনের জন্য একটি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে, আমি সেখান থেকে অর্ধবেলা সময় বাঁচিয়ে সুন্দরবনে সময় দিয়েছি। আমাকে তখন সুন্দরবনের জন্য আলাদা সময় দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার দরকার নেই। এমন সময়ও গেছে আমার; বাজেট থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আমাকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমি লেগে ছিলাম, দীর্ঘ সময়। মাঠের বাস্তবতার কথা বলছিল না; আমার নিজের (তৎকালীন) প্রতিষ্ঠানকে বোঝানোর জন্যও সময় দিতে হয়েছে। পরে আমার যারা বস ছিলেন বা আছেন তাদের একটা আস্থা তৈরি হয় আমার প্রতি। এটা খুবই সম্ভব, তার প্রমাণ আমি নিজে।
জলদস্যুদের মাঝে বিশ্বাসের জায়গাটা কীভাবে তৈরি করলেন?
মোহসীন-উল হাকিম: সোর্স মেইনটেইন করার জন্য অর্থনৈতিক কোনো সুবিধা আমার ছিল না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জলদস্যুদের সঙ্গে ও তাদের পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছি। বলা যায় একটা মানুষের জীবন আমার হাতে তুলে দেবেন, এজন্য তার যত কাছে যাওয়া যায় আমি যাওয়ার চেষ্টা করেছি, বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করেছি। সুন্দরবনকেন্দ্রিক এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা ও সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। দস্যুদের কখনো সরাসরি এক্সপোজ করিনি। তাদের তথ্য আমি কখনো কাউকে দেইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় দস্যুদের তথ্য চেয়েছে কিন্তু আমি দেইনি। আমি সব সময় মানুষের ক্ষতি, আতঙ্ক ও অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছি। প্রতিবেদন করতে গিয়ে আমি কারও পক্ষ নেইনি। ফলে সব পক্ষই আমাকে আস্থায় নিয়েছে। একইসঙ্গে আমি দেশের নাগরিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা মাথায় রেখেছি। চেয়েছি—সাধারণ মানুষের বিপদ মুক্তি। তাই দস্যুদের আত্মসমর্পণের জন্য যা যা করার করেছি।
জলদস্যুদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা বড় ব্যাপার ছিল। আমার মাধ্যমে তাদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন অনেক কিছু আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে মেইনটেইন করেছি।
২০০৯ সাল থেকে সুন্দরবনে আপনার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তাদের বিষয়ে কিছু বলবেন।
মোহসীন-উল হাকিম: এটি একটি বিশাল ব্যাপার। আমার একার পক্ষে এত বড় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। আমার কাজের পাশে থাকা মানুষগুলোর অনেক ভূমিকা রয়েছে। আমরা একটি টিম হয়ে কাজ করেছি। কেউ আমার সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন, কেউ আমার ভাই-বন্ধু হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক টিকে আছে। তারা এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো সুবিধা নেননি।





…………………………





আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন আমি নামগুলো বলতেই চাই। আমার সহকর্মী বায়জিদ ইসলাম পলিন; তিনি পুরো কাজের ৯০ শতাংশে ছিলেন। দীপু ভাই, মিরাজ, গৌতম সিনহা, বাগেরহাটের সহকর্মী ইয়ামিন ঢালী ভাই, খুলনার কনক ভাই, প্রবীর দা, সাতক্ষীরার আহসান রাজীবসহ অসংখ্য মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি), র্যাবের অসংখ্য অফিসারের সহযোগিতা পেয়েছি। এর মধ্যে র্যাবের একজন অফিসারের নাম বলতেই হবে। তিনি তৎকালীন র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবীর (বর্তমান পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল)।
বিশেষভাবে বলতে গেলে বেলায়েত সরদারের নাম বলতেই হয়। কারণ তিনি একজন প্রান্তিক মানুষ, সুযোগ পেয়েও নেননি, যা বিরল। দারিদ্র্য, অভাব তাদের অনেক কিছু করায়, কিন্তু তিনি করেননি। সুন্দরবনকে চেনা এমন একজন মানুষ তিনি, যাকে আমি বিশ্বাস করি। নিজের পেশাগত কাজ ফেলেও সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করার কাজে আমাকে সময় দিয়েছেন তিনি।
এই দীর্ঘযাত্রার কোনো স্মরণীয় ঘটনা…
মোহসীন-উল হাকিম: দস্যু জাহাঙ্গীরের নামে কাঁপতো পুরো সুন্দরবন। মানে সত্যি সত্যি কাঁপতো। দস্যুদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে মাঝে মাঝে কথা হতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বারবারই বলতেন, জাহাঙ্গীর কেন সারেন্ডার করে না? অর্থাৎ মন্ত্রীও এই দস্যুকে নামে চিনতেন। তিনি আমাকে জোর তাগাদা দিলেন। দিন তারিখ ঠিক হলো হঠাৎ করেই। সারেন্ডারের আগের দিন জাহাঙ্গীর আজব এক আবদার করে বসলেন। সেটি ছিল দলবলসহ সেই বাহিনীকে বন থেকে ওঠাতে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ীকে সঙ্গে নিতে হবে। বিরাট মুশকিলে পড়লাম। জাহাঙ্গীর প্রতারণা করবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলো। যদি আমাদের জিম্মি করে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায়? তাই শেষ পর্যন্ত শুধু জাহাঙ্গীরের স্ত্রীকে সঙ্গে নিলাম। আর সন্তানসহ পরিবারের অন্যদের ভদ্রা নদীর মুখে র্যাবের ট্রলারে রাখলাম। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।





…………………………





গভীর রাতে ভদ্রা নদী দিয়ে আমাদের ট্রলার নিয়ে এগুতে থাকলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পূর্বনির্ধারিত টর্চের সিগন্যাল পেলাম। ট্রলারের গতি কমাতেই একটা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে অন্ধকার ফুঁড়ে এগিয়ে এলেন দুস্য সরদার জাহাঙ্গীর। লাফ দিয়ে উঠলেন আমাদের ট্রলারে। তারপর সোজা আমার দিকে। শঙ্কিত হলেও নড়লাম না। দেখি জাহাঙ্গীর আমার পা ছুঁয়ে সালাম করছেন। মুহূর্তেই সব দুশ্চিন্তা উধাও। তারপর তাকিয়ে দেখি তিনি একে একে আমার সব সহযাত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করছেন। এটা ছিল আসলে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।
এদিকে প্রায় ভোর হয়ে এলো। ট্রলারের ভেতর থেকে তার স্ত্রীকে বের করে আনলাম। তারপরের দৃশ্য বলা বাহুল্য। দিনের আলো ফুটতেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হলো। ঘণ্টাখানেক পরেই দুর্ধর্ষ বনদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনীর সব সদস্যকে নিয়ে রওনা হলাম পশুর নদের দিকে। সেখানে জাহাঙ্গীর বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় অপেক্ষায় মেজর আদনান কবীরের নেতৃত্বে র্যাব ৮-এর নৌকা বহর।
জাগো নিউজ: ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোহসীন-উল হাকিম: আপনাকে এবং জাগো নিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।