




…………………………





শারমিন আক্তারের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবেন। শৈশব থেকে চরম দারিদ্র্য আর প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বিজ্ঞান বিভাগে।
…….
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার আবদুর সবুর প্রামাণিকের মেয়ে শারমিন আক্তার। বাবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, আর মা মোছা. তহমিনা বিবি একজন গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে শারমিন আক্তার মেজ। ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষ্ণনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।





…………………………





উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে হঠাৎ করোনার ঢেউ পরিকল্পনা সব ওলট–পালট করে দেয়। পরীক্ষার অপেক্ষায় কেটেছে অনেকগুলো দিন। আদৌ পরীক্ষা হবে কি হবে না, সেই অনিশ্চয়তা তো ছিলই। মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচের ভাবনা স্বপ্নটাকে ফিকে করে দিচ্ছিল। এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে শুরু হলো মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালে স্বজনহারাদের কান্না, আর আহাজারি। সবাই যখন ঘরবন্দী, তখনো সাহসের সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে কাজ করে গেছেন নার্সরা। নার্সদের এই সাহসী ভূমিকা দাগ কাটে শারমিনের মনে। সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসক হতে না পারলেও নার্স তিনি হবেন। এতে মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাবাকেও খুব বেশি চাপে পড়তে হবে না।
অভাবের কারণেই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ‘সাহস’ করতে পারেননি শারমিন। নানা বাধা পেরিয়ে অংশ নিয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষায়। জাতীয় মেধাতালিকায় পেয়েছেন প্রথম অবস্থান। গত ১ অক্টোবর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ ঘণ্টায় ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। ৪ অক্টোবর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় শারমিনের মোট স্কোর ছিল ১৫০–এর মধ্যে ১৪৩। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৯৩। ৫৫ হাজার ৭৩৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এগিয়ে আছেন শারমিন। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বগুড়ার নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজ। শারমিন ভর্তি হয়েছেন জয়পুরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউটে।





…………………………





জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার আবদুর সবুর প্রামাণিকের মেয়ে শারমিন আক্তার। বাবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, আর মা মোছা. তহমিনা বিবি একজন গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে শারমিন আক্তার মেজ। ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষ্ণনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
শারমিন বলছিলেন করোনাকালের দীর্ঘ অনিশ্চয়তার দিনগুলোর কথা, ‘ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। চিকিৎসক হওয়ার জন্যই রাত জেগে পড়াশোনা ও কঠোর পরিশ্রম করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম, অনলাইন কোচিংয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিইনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম, চান্সও পেয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতেই ভর্তি হয়েছি। শুধু ভালো সেবিকা নয়, ভালো মানুষ হতে চাই।’





…………………………





অভাব–অনটনের মধ্যে কষ্ট করে মেয়েদের বড় করেছেন আবদুর সবুর প্রামাণিক। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মেজ মেয়ে শারমিন চিকিৎসক হবে, এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন ঠিকই। কিন্তু মেয়ে যে এমবিবিএস ডিগ্রির বদলে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতেও তিনি খুশি।
শারমিনের এই সাফল্যে খুশি তাঁর স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরাও। কৃষ্ণনগর উচ্চবিদ্যালয়ে শারমিনকে ইতিমধ্যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘শারমিন আমাদের স্কুলের খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করেছে। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে ভর্তি পরীক্ষাতেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় ওর মতো আমরাও কষ্ট পাচ্ছি। তবে ভালো নার্স ও ভালো মানুষ হয়ে ওঠার জন্য মনের ভেতরে পুষে রাখা ওর অদম্য ইচ্ছাটুকু পূরণ হোক, শিক্ষক হিসেবে এটাই আমার শুভকামনা।’