Wed. May 24th, 2023

    …………………………

    কিছুদিনের মধ্যেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে শুরু করবে। কোথায় ভর্তি হব, কোন বিষয় ভর্তি হব—এসব নিয়ে সাধারণত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সময় নানা দুশ্চিন্তা, সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করে। উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী কী মাথায় রাখা উচিত, সে সম্পর্কেই একটু আলোচনা করা যাক।
    ……
    ১. নিজের পছন্দই প্রাধান্য পাবে, তবে…
    ……
    বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জেনে, সেই বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর ভবিষ্যতে কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে, সেসব জেনে-শুনে, তারপরই পছন্দ নির্ধারণ করা উচিত। কোনো একটি বিষয় পছন্দ করার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত—কেন এটি আমি পছন্দ করছি। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য কিংবা এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারবে, এমন কারও সঙ্গে কথা বলে সেটির যথার্থতা যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে খুব ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যেকোনো একটি বিষয়ের পেজে গেলেই সে বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।

    …………………………

    ২. চতুর্থ শিল্পবিপ্লব

    এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভবিষ্যতের চাকরির বাজার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চাকরির ক্ষেত্রে যেকোনো বিষয় থেকে পাস করেই আবেদন করা গেলেও কিছু কিছু পেশায় নির্দিষ্ট বিষয় থেকে পাস করলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে এ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে পাস করা স্নাতকেরা চাকরির বাজারে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বলে ধারণা করা হয়। মূলত, প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। ইন্টারনেট বা ইউটিউবে খুঁজে দেখলে এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা পাওয়া যাবে।

    ৩. ব্যবসা প্রশাসনে দক্ষ লোকের চাহিদা

    চাকরির বাজারে ব্যবসা প্রশাসন–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে দক্ষ লোকজনের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আমাদের পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত লোকবলের অভাবে ক্ষেত্রবিশেষে বাইরের দেশ থেকে লোকবল নিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে। অতএব নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এখানে আছে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ। আবার দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সামাজিক বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর চাহিদা। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে এ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে পাস করা স্নাতকদের রয়েছে দারুণ সুযোগ।

    ৪. সৃষ্টিশীল কাজের আবেদন থাকবে সব সময়

    মানবিক ও কলা অনুষদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে রয়েছে সৃষ্টিশীল এবং চিন্তাশীল কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ। এই বিষয়গুলো মানবসভ্যতার কোনো পর্যায়েই আবেদন বা গুরুত্ব হারাবে না। এগুলোর প্রতিটিতেই রয়েছে সংশ্লিষ্ট চাকরির বাজার। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে বিষয়েই পড়াশোনা করা হোক না কেন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারলে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে প্রবেশ কিংবা স্বাধীন উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ থাকে।

    …………………………

    ৫. গবেষণায় থাকে যদি আগ্রহ

    বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে শিক্ষকতা কিংবা গবেষণার মতো পেশাও বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহ এবং ভালো লাগার বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হয়। কোনো একটি বিষয়ের প্রতি আবেগ ও ভালো লাগা না থাকলে সে বিষয়ে গবেষণা করা কঠিন। উল্লেখ্য, এখানে অনেকের জানার আগ্রহ থাকতে পারে, বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরও উচ্চতর ডিগ্রি কীভাবে অর্জন করতে হয়। মূলত যেকোনো অনুষদ বা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর, নির্ধারিত যোগ্যতা থাকলে আরও উচ্চতর ডিগ্রি (যেমন পিএইচডি) অর্জনের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে বিশ্ববাজারে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কিছু কিছু বিষয়ে ফান্ড/বৃত্তি তুলনামূলক কম বা বেশি হয়ে থাকে।

    ৬. পছন্দের বিষয়ই শেষ কথা নয়

    বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করে না, বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় ক্ষেত্র। এখানে তারা সামাজিক আচরণ, যোগাযোগের ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারা, উপস্থাপন করতে পারা এবং নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি ‘সফট স্কিল’ আয়ত্ত করার সুযোগ পায়। বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্য—যে বিভাগেই পড়ি না কেন, সফট স্কিল অর্জনের সঙ্গে আদতে পড়ার বিষয়ের খুব একটা সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতে সফল পেশাজীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দক্ষতাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতএব অনেক ক্ষেত্রে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে না পারলেও যেখান থেকে এই দক্ষতাগুলো ভালোভাবে অর্জন করা যাবে, বিষয় বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।

    ৭. আনন্দ নিয়ে পড়ি

    পরিবার বা অভিভাবকদেরও কিছু বিষয়ে সতর্ক এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে। যেমন কোনো একজন শিক্ষার্থী যদি বুঝতে পারে, একটি নির্দিষ্ট বিভাগে পড়া তার জন্য কঠিন হবে, উদাহরণস্বরূপ হতে পারে সেটি গণিত, রসায়ন, ইংরেজি কিংবা হিসাববিজ্ঞান, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিয়ে তারপরও শিক্ষার্থীকে সে বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। আনন্দসহকারে যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, শিক্ষার্থীরা সে বিষয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো করে।

    লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়