




…………………………





ফার্নিচার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সুমন চেয়েছিলেন তার স্ত্রী মিসেস ফাতেমা পান্না পারিবারিক কাজে সময় দেবেন। অন্য গৃহবধূর মতো তার সংসার আগলে রাখবেন। কিন্তু ফাতেমা পান্নার জীবনের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষকে সহায়তা করার। কর্মসংস্থান তৈরি করার।
……
পান্না তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বাবার অনুপ্রেরণায় মাধ্যমিকে পড়ার সময় সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে একটি সেলাই মেশিন কেনেন। ১৯৯৬ সালে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফাতেমা পান্নার পথচলা শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছেন আপন গন্তব্যে।





…………………………





এরমধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন এ উদ্যোক্তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাওয়ালপুর ইউনিয়নে ‘ভাই-বোন সততা ফার্ম ও মৎস্য খামার’ নামে মাছের ব্যবসা আছে। গ্রামের নারীদের সাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ৫টি সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ শেখাচ্ছেন। দু’জন প্রশিক্ষক আছেন। কাজ শিখছেন এলাকার ২০ নারী। এ ছাড়া পুরুষদের ড্রাইভিং শেখানোর জন্য দুটি প্রাইভেটকার আছে।
তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তার বাবার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাওয়ালপুর ইউনিয়নের আবুল ঢালীরকান্দি গ্রামে। বাবার নাম মরহুম আব্দুল মালেক সরদার। বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৯৯ সালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০২ সালে বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি ও ২০০৫ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।





…………………………





১৯৯৯ সালে মিজানুর রহমান সুমনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তবে তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। ঢাকার পান্থপথে স্বামীর সঙ্গে ফার্নিচার ব্যবসা করতেন। এখন তিনি শরীয়তপুরে ফিরেছেন। তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন জাগো নিউজকে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের আগে বাবার একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশিক্ষকের কাছে সেলাই প্রশিক্ষণ নেই। ইতোমধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। পরে স্বামীর সঙ্গে ঢাকা চলে যাই। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেলাইয়ের কাজ ও মাছ চাষ করে জমানো ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসি। ওই টাকা দিয়ে গ্রামের নারীদের সাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাছাড়া স্বামীর সহযোগিতায় ২ বছর ধরে এলাকার ৭টি ঘের লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। এলাকার বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান করাই আমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।’
এলাকার সমাজসেবক সুমাইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফাতেমা পান্না স্বপ্নচারী ও পরিশ্রমী নারী। বাধা পেরিয়ে এতদূর পথ এসেছেন। নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পুরুষদেরও কাজ দিচ্ছেন। তিনি একজন উদ্যোক্তা। নারী হয়েও সমাজের জন্য কিছু করতে চান।’
উদ্যোক্তা ফাতেমা পান্নার স্বামী মিজানুর রহমান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পান্নার অদম্য সাহস, পরিশ্রম ও ত্যাগের কারণে শরীয়তপুরে পরিচিতি পেয়েছি। এখন আমি তার কাজে সহযোগিতা করছি।’