




…………………………





চলমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন হাজারো মানুষকে সেবা দিচ্ছে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বহুমুখী সেবা দিয়ে বেকার জনগোষ্ঠী ও বিদেশগামীদের কাছে এক জাদুকরী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। অর্ধেকেরও কম জনবল আর নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটির এমন সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে।
……
জেলার বেকার যুবক-যুবতীদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়। এ প্রতিষ্ঠানে এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) এবং স্বনির্ভর কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া বিদেশগামীদের তিনদিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও করোনা টিকা নিবন্ধনসহ প্রবাসীদের কল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।





…………………………





এক সময় নোয়াখালী অথবা কুমিল্লায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো জেলার বিদেশগামীদের। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ বিভিন্ন সেবা পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। তবে এখানেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায়ই সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
বিদেশগামী সেবাগ্রহীতারা জানান, তিনদিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ খুবই চমৎকার একটি আয়োজন। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশের যাওয়ার প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থানে যোগদান এবং বর্তমান প্রতিযোগিতার এ যুগে টিকে থাকার সব উপায়-উপকরণ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও করোনা টিকাসহ যাবতীয় সেবা এখানে পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রায়ই বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া গ্রামীণ নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে এ করোনা মহামারির মধ্যেও দারুণ সাফল্য দেখাচ্ছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীরা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই ইনকাম করছেন তারা।
এসইআইপি’র বিভিন্ন কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, এখানে প্রশিক্ষণ নিতে কোনো টাকা-পয়সা খরচ করতে হয় না। বরং প্রশিক্ষণার্থীকেই সরকার নির্ধারিত হারে ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রশিক্ষকরা খুবই আন্তরিকভাবে কাজ শেখান বলেও জানান তারা।





…………………………





গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সের প্রশিক্ষক নূর হাসান বলেন, চার মাস মেয়াদি এ কোর্সের সিলেবাস শেষ করে আমাদের প্রশিক্ষণার্থীরা লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের জব প্লেসমেন্ট অফিসারও নিয়োজিত রয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপাধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান বলেন, বর্তমানে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্যোক্তা তৈরির কারখানা হিসেবেই কাজ করছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী এবং দক্ষ করে তুলছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।
তবে সার্বিকভাবে কারিগরি শিক্ষায় বেকার যুবক-যুবতীদের দক্ষ করে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার বিদেশগামী এ প্রতিষ্ঠানে তিনদিনের প্রি-ডিপার্চর ট্রেনিং করে বিদেশ গেছেন। এছাড়া এসএসসি ভোকেশনাল, স্বনির্ভর কোর্স এবং এসইআইপি’র বিভিন্ন কোর্সে প্রতি বছর হাজারো বেকার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।





…………………………





প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রায়ই সব কাজই বিদ্যুতের সঙ্গে জড়িত। যে কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায়ই প্রশিক্ষণ ও সেবা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। ফলে প্রশিক্ষণার্থী এবং সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এসইআইপি’র কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে- চার মাস মেয়াদি গ্রাফিক্স ডিজাইন, গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং, মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন এবং মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স।
মোটর ড্রাইভিং কোর্সে নির্ধারিত হারে ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। এছাড়া সব কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীরাই জব প্লেসমেন্ট অফিসারের মাধ্যমে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এসব কোর্সে ভর্তি হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পাস অথবা এসএসসি কিংবা সর্বোচ্চ এইচএসসি সার্টিফিকেট দেখাতে হয়।





…………………………





এদিকে, এসএসসি ভোকেশনাল অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রমে আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, ড্রেস মেকিং এবং সিভিল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড ট্রেড চালু রয়েছে।
এছাড়া স্বনির্ভর কোর্সে চালু রয়েছে- ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হাউস ওয়্যারিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং, গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং ও ফ্রিল্যান্সিং। স্পোকেন ইংলিশ এবং কোরিয়ান ভাষা শিগগিরই চালু করার কথা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের ডিসি আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, বিভিন্ন মেয়াদি কোর্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে এ কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে দক্ষ নাগরিক তৈরি হবে। পাশাপাশি সমাজ বিনির্মাণে তারা অনেক ভূমিকা পালন করতে পারবে।