Fri. Sep 22nd, 2023

    চট্টগ্রাম বিশ্ব’বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর আবদুর রহমান চাকরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পরি’বারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্বও ছিল অনেক বেশি।

     

    তাই অন্য কিছু ভাবার অব’কাশ ছিল না। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।

    একসময় সাহস করে চাকরি ছেড়ে দেন। হাত দিলেন কোয়েলের খামার গড়ার কাজে। এখন তিনি সফল খামারি। চাকরি ছাড়ার সেই সাহসে পূ’রণ হলো উদ্যো’ক্তার স্বপ্ন।

    লোহাগাড়া উপ’জেলার বড়হাতিয়া কুমিরাঘোনার সিকদার’পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমানের কাজ এখন এলাকার তরুণ’দেরও আগ্রহের কেন্দ্র’বিন্দুতে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা’সড়কের পাশে চুনতি ইউনিয়নের সিরাত মাঠ’সংলগ্ন স্থানে তাঁর খামার ‘এআরবি কোয়েল ফার্ম’।

     

    কোয়েল চাষের জন্য বগুড়া ও নওগাঁ গিয়ে বিভিন্ন হ্যাচারি পরি’দর্শন করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই খামার গড়ার কাজে হাত দেন আব্দুর রহমান। এ বছরের জানুয়ারি মাসে দেড় হাজার কোয়েল দিয়ে শুরু করেন। তিন মাসেই সাফল্যের দেখা পান।

    দিনে দিনে বেড়েছে কোয়েলের সংখ্যা, এখন দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে। সম্প্রতি খামারে গেলে কথা হয় আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, “সাত লাখ টাকা মূল’ধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকায় ২০ শতক জায়গা ভাড়া নেন। খামারের জন্য কেনেন দুটি জেনারেটর, ইনকিউ’বেটর মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি।”

    এতদিন করেছেন চাকরি, হঠাৎ করে হাত দিলেন খামার গড়ার কাজে। অভিজ্ঞতা ছিল কি না? এ প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘আমি আগে কোনো ধরনের খামার করিনি। ইন্টার’নেট ও পত্রিকায় ছাপানো বিভিন্ন খামারের সফ’লতার গল্প পড়েই মূলত উদ্বুদ্ধ হয়েছি।’

     

    খামার ঘুরে দেখা গেছে, “বড় তিনটি শেডে চলছে কোয়েলের চাষ। সার্বক্ষণিক কাজ করেন ৪ জন কর্মচারী। এরপরও আবদুর রহমান খামারের কাজে হাত লাগান, তদারকি করেন।

    আবদুর রহমান জানান, “কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা হতে প্রায় ১৮ দিন সময় লাগে। প্রতিটি কোয়েল ১০০-১৫০ গ্রাম হলেই বিক্রির উপযুক্ত হয়। প্রতিদিন ৩ বেলা পানি ও খাদ্য দিতে হয়। সাধারণত একটি কোয়েল জন্মের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে বিক্রি করা যায়।

    প্রতিটি কোয়েল বর্তমানে ৩২ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতি মাসে গড়ে ১৫-১৭ হাজার কোয়েল বিক্রি করেন। তাঁর খামারে উৎপাদিত কোয়েল বটতলী, চুনতি, কেরানীহাট, চকরিয়া, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরেও বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় ৩০ হাজার টাকা।

     

    বটতলী বাজারের স্থানীয় বিক্রেতা আবদুল কুদ্দুছ জানান, “প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০০ কোয়েল তিনি আবদুর রহমানের খামার থেকে কেনেন। কোয়েল বিক্রি করে তিনিও ভালো লাভ করেন। চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার’ম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, “আবদুর রহমান এলাকার তরুণদের পথ দেখাচ্ছেন। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলা’কায় অনেকে খামার গড়তে আগ্রহী হয়ে’ছেন।”

    লোহাগাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দেওয়ান বলেন, “কোয়েলের মাংস ও ডিম প্রোটিন’সমৃদ্ধ। বাজারেও রয়েছে ভালো চাহিদা। কোয়েলের খামার গড়ে স্বাব’লম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবদুর রহমানের খামার সম্পর্কে শুনেছি।

    খামার পরিদর্শন করে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

     

    আবদুুর রহমান তাঁর খামারের পরিধি আরও বাড়াতে চান। এই অঞ্চলে কোয়েলের চাষ ছড়িয়ে দিতেও তিনি কাজ করছেন। খামার গড়তে স্থানীয় তরুণ’দের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “‘বড় কিছু করব এই চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। কম পুঁজি দিয়ে ছোট পরি’সরে হলেও শুরু করতে হবে।”’

    তথ্যসুত্র: প্রথমআলো।

    ®Worthytalkbd.com