Wed. Mar 29th, 2023

    ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ এদেশের বেসরকারি খাতের অত্যন্ত সফল শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতা। তিনি ফার সিরামিকস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সিরামিকওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিরামিক শিল্পখাতের বিকাশে তাঁর অবদান প্রণিধানযোগ্য।

    ফার সিরামিকস প্রতিষ্ঠার আগে ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ আরো দুটি সিরামিক ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। সিরামিক শিল্পে তাঁর প্রথম বিনিয়োগ ১৯৮৮ সালে। সেই বছর তাইওয়ানের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে গড়ে তোলেন ‘বানথাই সিরামিক লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই যৌথ উদ্যোগে জনাব ফরহাদ ক্ষুুদ্র একটি পোরসেলিন পটারি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলেন এবং শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন।

    সিরামিক শিল্পে ইফতেখার উদ্দিন পরবর্তী উদ্যোগে টাইলস উৎপাদনে গড়ে তোলেন ‘ফু ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ’ এবং ১৯৯২ থেকে ’৯৪ এই দু’বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (শেয়ারহোল্ডার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিরামিক স্বপ্নময়তায় আচ্ছন্ন ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদের গড়া তৃতীয় সিরামিক ফ্যাক্টরি ‘ফার সিরামিকস লিমিটেড’। যা বর্তমানে টেবিলওয়্যার উৎপাদন এবং স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে বিপণনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

    ইউরোপীয় স্ট্যাট অব আর্ট টেকনোলজি সমৃদ্ধ ফার সিরামিকস হার্ড পোরসেলিন উৎপাদনে আসে ২০০৭ সালে। গত এক দশকের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে ন্যাশনাল এক্সপোর্ট ট্রফি এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অনবদ্য অবদানের কারণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সিআইপি মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন ফার সিরামিকসের স্বপ্নদ্রষ্টা ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ এবং তাঁর সহধর্মিণী খোদেজা ফরহাদ রুহ।। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ফার সিরামিকস স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছে ৩০ কোটি টাকার পণ্য এবং রপ্তানি করেছে আরও ৭০ কোটি টাকার তৈষজপত্র। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিড স্টোর বাজার এলাকায় বিস্তৃত পরিসরে গড়ে তোলা সিরামিক কারখানাটিতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় সহস্রাধিক মানুষের। ইউরো ফাইন পোরসেলিন তৈরিতে নিযুক্ত ফার সিরামিকসের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ মিলিয়ন পিস (প্রতিবছর)।

    নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ। তাঁর পিতা আকতারুজ্জামান এবং মাতা মমতাজ বেগম। শিশুবেলায় পিতা হারানো জনাব ফরহাদ বেড়ে ওঠেন মাতা মমতাজ বেগমের পরম মমতা, স্নেহ ও শাসনে। সেই থেকে তীক্ষ্ন বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষটি সংগ্রামশীল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। ক্যারিয়ার গড়ার দৃঢ় মনোবলে ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের পর পুরোপুরি নানাবিধ ব্যবসায় উদ্যোগে সম্পৃক্ত করেন নিজেকে। ১৯৯০ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘এস এস এ্যারোস্প্যান লিমিটেড’ এবং ‘এসএস মটরস লিমিটেড’। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)-এর সঙ্গে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেন।

    বলাবাহুল্য, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রভূত সাফল্য লাভ করেন ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ। এরপর শ্রমঘন ও সম্ভাবনাময় সিরামিক শিল্পখাতে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও পরবর্তীতে ফার সিরামিকসের মাধ্যমে এ খাতে নিজেকে থিতু করেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সমান পারদর্শী জনাব ফরহাদ যোগাযোগ দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, পণ্য বিপণন কৌশল, লিডারশিপ কোয়ালিটি এবং সর্বোপরি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা গুণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

    ২০১১-২০১৩ সাল মেয়াদে তিনি বাংলাদেশ সিরামিকওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)-এর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ক্ষমতাসীন থাকাকালে ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ব্যাপক বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ দেখেছেন ইউরোপ ও এশিয়ার বহুদেশ। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি ভ্রমণ করেছেন যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, চীন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড।

    ব্যক্তিজীবনে ইফতেখার উদ্দিন ফরহাদ রেখে যান সহধর্মিণী খোদেজা ফরহাদ রুহি এবং ঔরসজাত ৩ পুত্র সন্তানকে। এরা হলেন ইমতিয়াজ উদ্দিন, ইরফান উদ্দিন ও ইশরাক উদ্দিন। জনাব ফরহাদের অবর্তমানে ফার সিরামিকের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর সহধর্মিণী খোদেজা ফরহাদ রুহ।।

    তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট