




@মোঃ নাসিব আহমেদ খান
৩৮ তম বিসিএস এ বিসিএস(কৃষি) ক্যাডারে সুপারিশপাপ্ত।
আমি ২০১৬ সালে, অনার্স ৪র্থ বর্ষে থাকাকালীন প্রথম বিসিএস প্রিলির জন্য পড়াশোনা শুরু করি। এখন পর্যন্ত দুটো চাকরির ভাইভাতে উপস্থিত হয়েছি এবং দুটোতেই চাকরি পেয়েছি। আল্লাহ তায়ালার রহমতে, ৩৮তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশ;প্রাপ্ত আছি এবং জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বিসিএস প্রিলিমিনারি পাশের কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতাঃ
১. আমি প্রথমবার বিসিএস দিচ্ছি, আমার মনে হয় হবেনাঃ অনেকে প্রস্তুতি ভালো হবার পরও প্রথম বিসিএস, তাই সিরিয়াসলি নেয় না। তার পেছনে অন্যতম কারন কোচিং সেন্টারের কিছু বড়ভাই এবং আরো কিছু বিশিষ্ট বড় ভাইদের কাছ থেকে বিসিএস নিয়ে ভয়েরর গল্প শোনা।





………………………….





২. প্রশ্ন বিশ্লেষন না করে গাইড বই এর একপাশ থেকে আরেক পাশ শেষ করাঃ এতে করে প্রয়োজনীয় বিষয়ের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বেশি পড়া হয়ে যায়। যার ফলে আপনার মাথা সিগনাল পায় যে, সিলেবাস তো অনেক বড়, আর আমার দ্বারা সম্ভব না। তাই এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কষ্ট করে হলেও ২-৩ দিন ব্যয় করে শুধু বিগত সালের প্রশ্নগুলো পড়া এবং ওই প্রশ্নগুলো গাইড বইয়ের কোথা থেকে এসেছে, সেটা কি টেক্সট বই এ পাওয়া যায় কিনা? সেটা খুজে বের করা। । গাইড থেকে এলেও একদম কমন টপিক নাকি গাইডের কোন চিপা থেকে এসেছে, সেটি খোজ নেয়।।
৩. দুই একটা কঠিন বিষয় না পেরে ভেঙ্গে পড়াঃ বিশ্বাস করেন যারা ক্যাডার হচ্ছে বা হয়েছে অথবা সামনে হবে, কেউ-ই প্রিলির ২০০ নম্বরের বিষারদ নয়। আমার পরিচিত সফল সব ভাইকেই দেখেছি তারা এভারেজ ১৭০ নম্বরের প্রস্তুতি নিতেন। পড়ার সময় কঠিন বিষয়গুলো বাদ দিতে পারাটাও একটা যোগ্যতা। আমি পড়ার সময় যেটা মনে রাখতে পারতাম না, সেটা ভাবতাম এটা আসবে না। আর আসলেও এটা ছাড়া বাকিগুলো দিয়ে আমি প্রিলিমিনারি টিকবো
…
৪. যা গলা দিয়ে নামবে না সেটা গলায় ঠেলাঠেলি করে অসুস্থ হওয়াঃ ৫ নম্বরের কঠিন বিষয় আত্মস্থকরণে অধিক সময়, এনার্জি নষ্ট করা; যদিও ওই সময়ে অনায়াসে অন্যবিষয়ে ১০ নম্বর দখলে নেয়া যেত। অর্থাৎ, সময় এর গুরুত্ব বুঝতে ভুল করা।
৫. কোন বিষয় পড়ার সময় সেটা দখলে নিয়ে পরের টপিকে যাওয়াঃ এটা ভালো প্রস্তুতি নিতে অনেক বড় বাধা হয়ে দ্বারায়। যেকোন বিষয়ের যেকোন টপিক একদিনে টানা ১০ বার পড়ার চেয়ে, অন্যবিষয়ের সাথে ১০ দিনে ১০ বার পড়া বেশি কাজে দেয়। তাই সব পড়াই ব্রেনে ঢোকানোর পাশাপাশি চোখে সেইভ করে রাখার চেষ্টা করতে হবে, যেগুলো বেশি কাজে দেয়।





……………………………





৬.ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করে পড়াশোনা করাঃ এটা প্রিলিমিনারি ফেলের অন্যতম কারণ! পড়তেছি, পড়া হচ্ছে বিষয়টা এমন না। আগামী ১ মাস অথবা আগামী ২ মাসের পড়ার নির্দিষ্ট রুটিন রাখতে হবে। পরীক্ষার আগের ১৫দিনের জন্য নিজের সাধ্য ও সময় অনুযায়ী উপযুক্ত Routine করে Revision করতে হবে।
৭৷ একটি বিষয় একটানা পড়াশুনা করাঃ বাংলা ব্যাকরণ মানেই টানা ৩ দিন এটাই পড়া, পরের ৩দিন বাংলা সাহিত্য পড়া। এরকম একটানা পড়াশোনার ফলে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী বিসিএস প্রলিতে অকৃতকার্য হয়। যেহেতু আমরা প্রিলিতে ২০০ নম্বরের একটা জগাখিচুরি এক্সামে বসি তাই আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, আগে থেকেই কয়েকটা বিষয় একসাথে পড়াশোনা করা।
…
৮. প্রতিটা বিষয়ের জন্য কোন কোন বই পড়বো সেটা ফিক্সড না করাঃ এটিও ফেল করার আরেকটা কারণ। যদি সম্ভব হয় তাহলে সাবজেক্ট অনুযায়ী টপিকগুলো খাতায় লিখে ফেলুন এবং সেই টপিকগুলো কোথা থেকে পড়বেন সেটা ফিক্সড করে লিখে রাখুন। এটা প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় লাগলেও, প্রিলির আগের ভাইটাল মুহুর্তে কোনটা কোথা থেকে পড়বো খুজতে গিয়ে মাথা গরম হবে না।
৯. আশেপাশের পড়ুয়া মানুষ দেখে নিজেকে ছোট ভাবাও আরেকটা বড় কারণ। ভাই অথবা বোন আপনাকেই বলছি, প্রতিবছর আপনার সাথে প্রিলি এক্সাম দেয় আগের রিটেনে পাশ করা ভাইয়ারা, আগের বিসিএসের ক্যাডার ভাইয়েরা এবং তারও আগের বিসিএস-এ ক্যাডার চেঞ্জ-এর আশায় থাকা ভাইয়েরা। তাই আশেপাশের ওমুক-তমুক ভাই এর প্রস্তুতি দেখে নিজেকে ছোট ভাবার কিছু নেই। আপনি যদি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন যে আমি আমার সবটুকু দিয়ে টেকনিকালি পড়াশুনা করেছি, ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন-ই। আমি এখনো দেখিনি যে, কেউ সত্যিকারের পরিশ্রম করেছে কিন্ত কোন চাকরি পায়নি ।





……………………………..





মোঃ নাসিব আহমেদ খান আরো লিখেন, “আমার প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য টপিক সিলেক্ট করে কয়েকটা বই থেকে পড়েছিলাম। আর টপিক নির্ধারণের জন্য প্রচুর এনালাইসিস করতাম, যা আমাকে প্রতিটা প্রিলি পাশ করতে সাহায্য করেছিলো। আমি প্রিলির আগে কোন কোচিং-এ মডেল টেস্ট দেইনি, তবে প্রচুর বাসায় মডে টেস্ট দিতাম। বিসিএস প্রিলির দিন একটানা ১৪৮টা প্রশ্ন দাগিয়েছিলাম, পরে আরও ১০টার মতো দিয়েছিলাম।
আমি নৈতিকতা ও সুশাসন এর জন্য আমার প্রস্তুতিতে ১ মিনিটও সময় ব্যয় করিনি। ফলে ১৯০-এ এক্সাম দেই।
আমার ধারনা অনুযায়ী আমার প্রাপ্ত নম্বর ছিলঃ-
বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে (৬০/৭০)
গণিত ও মানসিক দক্ষতায়(১৬/৩০)
সাধারণ জ্ঞানঃ বাংলাদেশ(১৮/৩০)
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ( ১৩/২০)
বিজ্ঞান ও কম্পিউটার (২৩/৩০)
ভূগোল ও পরিবেশে (৫/১০)
আর এই নম্বরের মাধ্যমেই একটি স্বপ্নের শুভ সূচনা হয়েছিলো।





পরিশেষে বলতে চাই, কেউ ১ ঘন্টা বা ২ ঘন্টায় চাকরির পরীক্ষায় হেরে যায়না, সে হেরে যায় তার আগের কয়েক মাসের প্রস্তুতির সময়।
লিখেছেনঃ মোঃ নাসিব আহমেদ খান, ৩৮ তম বিসিএস এ বিসিএস(কৃষি) ক্যাডারে সুপারিশপাপ্ত (১২ তম) ও জনতা ব্যাংক লিমিটেড এ সিনিয়র অফিসারে কর্মরত।