Sat. Dec 9th, 2023

    ©গাজী মিজানুর রহমান

    ***৩৫তম বিসিএস ক্যাডার

    ****সাবেক সিনিয়র অফিসার

    (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)

     

    ইতোমধ্যে ৪১তম BCS PRELIMINARY হয়ে গেছে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে পিএসসি প্রিলির রেজাল্ট দিবেন। যারা প্রিলিতে ভালো স্কোর ওঠাতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু পরীক্ষার্থী ফেইসবুক গ্রুপে, পেইজে, মেসেঞ্জারে রিকুয়েস্ট করেছেন যেন বিসিএস রিটেন নিয়ে লিখি।

    বলেছিলাম, সময় পেলে একদিন লিখব। এত দিন প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য “Authentic Model Test & Short Suggestion” বইয়ের কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকার কারণে লেখা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আজ লিখেই ফেলিলাম!

    আজ আমি আমার বাস্তব জীবনের ৩৪তম-৩৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করবো। যেহেতু আমি ৩৪তম বিসিএস যেটা বিসিএসের পুরাতন সিলেবাস ছিল এবং

     

    ৩৫তম থেকে ৩৭তম বিসিএস যেগুলো নতুন সিলাবাসের আলোকে হয়েছে এই ৪ টি লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি (৩৮তম ও ৪তম বিসিএস প্রিলিতে টিকলেও রিটেন দেই নি); আমার দুই ধরনের সিলেবাসে পরীক্ষা দেয়ার ও দুই ধরনের সিলেবাসে পাশ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

    এবার আসুন মূল কথায়, অনেকে ধারণা বিসিএস রিটেন অনেক কঠিন; প্রিলিতে কোনো মতে পাশ করা গেলেও রিটেনে সহজে পাশ করা যায় না!

    আমি এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। আমার মতে প্রিলিতে পাশ করাটা তুলনামূলক কিছুটা কঠিন রিটেনের চেয়ে; আর রিটেনে পাশ করাটা তুলনামূলক সহজ প্রিলি চেয়ে। কারণ পিএসসি প্রিলিতে পাশ করায় কম, কিন্তু রিটেনে ফেল করায় কম। অর্থাৎ, প্রিলির তুলনায় রিটেন অনেক গুণ বেশি পাশ করে।

     

    আপনাকে বিসিএস রিটেনে সহজে পাশ করতে যা যা পড়তে হবে, তা হলো-

    ১। রিটেনের জন্য আগে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়ুন; বিশেষ করে ৩৫তম-৪০তম পর্যন্ত। কারণ এগুলো নতুন সিলেবাসের আলোকে নতুন প্যাটার্নের প্রশ্ন।

    এতে করে বিসিএস রিটেনের প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। তাছাড়া  রিটেনের বিগত সালের অনেক প্রশ্ন হুবহু বা বিগত সালের কাছাকাছি প্রশ্ন কমন আসে।

    ২। অর্থনৈতিক সমীক্ষা এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন রেফারেন্স দিয়ার জন্য, দৈনিক পত্রিকা পড়ুন বিশেষত সম্পাদকীয় (প্রথম আলো হলে ভালো হয়)। এতে আপনার বেশি নাম্বার পেতে সহায়তা করবে।

     

    ৩। বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো পড়ুন।

    সংবিধানের জন্য আরিফ খানের সহজ ভাষায় সংবিধান বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

    ৪। বিজ্ঞানের ও তথ্যপ্রযুক্তি এর জন্য ওরাকল বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বইটি ভালো লেগেছে আমার কাছে। সাথে প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি বইটি পড়লে তথ্য ও প্রযুক্তি অংশে ভালো সাপোর্ট পাবেন।

    ৫। আন্তর্জাতিক এর জন্য শাহ মো: আব্দুল হাই এর “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংগঠন ও পররাষ্ট্রনীতি” বইটি সাথে রাখতে পারেন।

    ৬। ইংরেজির জন্য প্রফেসর’স Written English এর সাথে ইংরেজি ট্রান্সলেশনের জন্য “Saifur’s Translation and Writing” বইটি আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে। সাথে বেসিক বই হিসেবে PC Das এর Applied English Grammar and Composition বই ভালো সাপোর্ট দিবে ইংরেজির ক্ষেত্রে।

     

    *ইংলিশে Basic বেশি দুর্বল হলে আগে “BCS Preliminary Analysis” বইয়ের EnglishGrammar অংশে ভালোভাবে শেষ করে নিলে বেশি উপকৃত হবেন।

    ৭। গণিতের জন্য প্রফেসর’স লিখিত গণিত + ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণির গণিত করলে ভালো করতে পারবেন। তবে ৯ম-১০ম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বইয়ের যেসব অধ্যায় বিসিএস রিটেনের সিলেবাসের সাথে মিল আছে; সেই অধ্যায়গুলো করতে পারলে বেশ ভালো হবে।

    ৮। বাংলার জন্য প্রফেসর’স লিখিত বাংলা বইটির পাশাপাশি “শীকর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য” বইটি বা “বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা” বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

    *আর গ্রন্থ সমালোচনার জন্য বেশি কিছু না পড়ে শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনভিত্তিক যে কোনো দুটি বইয়ের গ্রন্থ সমালোচনা পড়লেই কমন পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ (বিগত সালের প্রশ্ন দেখলে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন বিষয়টা)

     

    ৯।  বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য প্রফেসর’স বাংলাদেশ বিষয়াবলি বইটির সাথে প্রফেসর মোজাম্মেল হকের একাদশ শ্রেণির পৌরনীতি বইগুলো (বিশেষত দ্বিতীয় পত্র) ব্যাপক কাজে দিবে। সাথে ড. আবু মো: দেলোয়ার স্যারের “বাংলাদেশের ইতিহাস” বইটি রাখতে পারেন (যা ভাইভাতেও কাজে দিবে)।

    ১০। কেউ বোথ ক্যাডার দিয়ে থাকলে, নিজের সাবজেক্ট এর বিগত সালের বিসিএস লিখিত প্রশ্ন (যারা আপনার বিষয়ে আগে বিসিএস দিয়েছে তাদের কাছে পাবেন) কালেক্ট করে সেগুলো আগে সমাধান করবেন। সাবজেক্টিভে বিগত সালের অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়। তারপর প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝে অনার্সের বইগুলো থেকে সেই অনুযায়ী পড়ুন। সাথে আপনার সাবজেক্ট এর নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিত একটি বই রাখলে আরো ভালো করতে পারবেন।

     

    *মনে রাখবেন, কোনো প্রকাশনীর সকল বই সাধারণত ভালো হয় না।

    *আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, আপনি যদি কোনোভাবে বিসিএস প্রিলিটা পাশ করতে পারেন তাহলে রিটেন ও ভাইভাতে যদি ভালো নাম্বার পান তাহলে ক্যাডার নিশ্চিত! আর যদি রিটেন ও ভাইভাতে Average নাম্বারও পান তাহলে নন-ক্যাডারের মাধ্যমে সরকারি ফার্স্ট ক্লাস বা সেকেন্ড ক্লাস একটি জব পেতে পারেন কোনো প্রকার ঘুষ-তদবির ছাড়াই!

    *আমি এখানে আমার ৩৪তম-৩৭তম বিসিএস রিটেনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শেয়ার করলাম। কারো কাছে ভালো না লাগলে বা অপ্রয়োজনীয় মনে হলে নিজের মতো করে এড়িয়ে যেতে পারেন।

     

    *সকল পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।

    @worthytalkbd.com