Tue. Dec 5th, 2023

    চাকরিপ্রার্থীরা সাধারণত কাছাকাছি সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। এসব পরীক্ষার জন্য তাঁদের একই সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে হয়। পরিকল্পিতভাবে একই পড়া পড়েও একাধিক চাকরির প্রস্তুতি সেরে নেওয়া যায়। বিসিএস,                       জুডিশিয়ারি, ব্যাংক ও অন্যান্য চাকরির সমন্বিত প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রসিকিউটিং অফিসার বেলাল হোসাইন।

    ###একই টপিকে একাধিক ফরম্যাটের প্রশ্নঃ

    কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সম্ভাব্য অনেক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এসব বিষয়ে কৌশল করে                           এমন-ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব, যাতে একাধিক ধারার চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়।
    একবার যিনি পূর্ণাঙ্গ মৌলিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারেন, তাঁর একাধিক চাকরি পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। যেমন—সর্বশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সংবিধান থেকে একটি প্রশ্ন ছিল এমন যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ অনুযায়ী                            পরিচালিত হয়? ঠিক এই প্রশ্ন লিখিত পরীক্ষায় এলে এভাবে আসতে পারে ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি কী? সংবিধানের আলোকে ব্যাখ্যা করুন।’
    ঠিক এই টপিকটিই যখন ভাইভা বোর্ডে জানতে চাইবে, তখন তাঁরা জিজ্ঞেস                                   করতে পারেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে কী কী সমস্যা আছে? এসব সমস্যা আপনি কিভাবে মোকাবেলা করবেন?’

    লক্ষ করলে দেখবেন, একই টপিকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শুধু রেফারেন্স জানলেই উত্তর করা যাচ্ছে। লিখিত পরীক্ষায় বিশদভাবে বর্ণনা করা লাগছে। আর ভাইভায় বাস্তব সমস্যাকে                         সামনে আলোচনা করে সমাধান করতে হচ্ছে। কী বুঝলেন? আসলে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা হলো বিস্তারিত পড়ার বিষয়। কিন্তু প্রিলিমিনারিতে মূল ব্যাপার বা কি-ওয়ার্ড মাথায় থাকলেই হলো! এখন প্রশ্ন হতে পারে, শুধু প্রিলিমিনারি-সংশ্লিষ্ট পড়া পড়ব, নাকি লিখিত-ভাইভাসহ পড়ব? আমি বলব, প্রিলি পাস করলেই যেহেতু লিখিত পরীক্ষার প্রসঙ্গ আসে, তাহলে আগে প্রিলির জন্য তৈরি থাকুন।
    আবার অনেকে জিজ্ঞেস করেন, প্রিলি পাসের পর লিখিত                             পরীক্ষার জন্য বেশি সময় থাকে না। এই অল্প সময়ে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন, এই আলোচনায় এসব বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।

    ♦ প্রিলিতে ফেল করার কারণঃ
    প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে কে কত বেশি নম্বর পেল, সেটা জরুরি না। পাস হলো কি না                      সেটাই দেখা হয়। তাই শুধু পাস করাকে টার্গেট করে জটিল ও কঠিন টপিক পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া উচিত! কিন্তু বেশির ভাগ প্রার্থী কোনো কিছু বাদ না দিয়ে গোগ্রাসে সব পড়তে গিয়ে শেষে দরকারি অনেক কিছুরই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পান না! অনেকের বেলায় প্রিলি ফেলের অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘বেশি পড়া’! বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন সহজ বা কঠিন যা-ই হোক না কেন, পাস করতে                         কোনোভাবেই ১২৫-১৩০ এর বেশি নম্বর লাগবে না! আর জুডিশিয়ারিতে সাধারণত ৫৫-৬৫ এর বেশি লাগে না। শুনে অবাক হলেও বাস্তবে এটাই সত্যি!

    ♦ পড়াশোনা গুছিয়ে নেবেন যেভাবেঃ
    প্রথমত, বিসিএস, জুডিশিয়ারি, ব্যাংক ও আইন কর্মকর্তা পদের সিলেবাস                          থাকলে সেগুলো একসঙ্গে নিয়ে বসুন। এবার সব সিলেবাসের কমন জায়গাগুলো সংকলন করে আলাদাভাবে একটি নিজস্ব সিলেবাস বা প্রস্তুতি গাইডলাইন তৈরি করুন। বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে গুরুত্বের ভিত্তিতে টপিক র‌্যাংকিং করুন। এবার আপনার প্রথম কাজ এই টপিকগুলো আগে শেষ করা।
    ♦ কমন বিষয়বস্তু চিহ্নিত করুনঃ
    বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বর, জুডিশিয়ারিতে ১০০ নম্বর এবং ব্যাংকে ৮০-১০০ নম্বর থাকে। জুডিশিয়ারির প্রিলিতে সাধারণ বিষয় অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান,                                  গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি মিলিয়ে মোট ৪০ নম্বর থাকে। বিসিএসের প্রস্তুতি থেকে এই ৪০ নম্বরের মধ্যে বেশির ভাগই নিশ্চিত করা যায়।

    লিখিত পরীক্ষায় বিসিএসের সাধারণ ৯০০ নম্বরের প্রায় সব টপিক জুডিশিয়ারির রিটেনের সাধারণ অংশের ৪০০ নম্বরের মধ্যে থাকে। কিন্তু বিসিএসের গণিতের তুলনায় জুডিশিয়ারির গণিত অনেকটা সহজ হয়। তাই আগে জুডিশিয়ারির                              গণিত শেষ করতে পারলে বিসিএসের জন্য গণিতের প্রস্তুতির অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে যাবে। ব্যাংকের ২০০ নম্বরের রিটেনের মধ্যে অনুবাদ, ফোকাস রাইটিং, বাংলা-ইংরেজি রচনা, গণিতের পাটিগণিত অংশ প্রায় সবই বিসিএস-জুডিশিয়ারির মধ্যে থেকেই থাকে। ব্যাংকের প্রশ্নে লিখিত পরীক্ষায় খুব সাম্প্রতিক ইস্যু বেশি থাকে, যা বিসিএস বা জুডিশিয়ারির বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক                                   বিষয়াবলির সঙ্গে খুব মিলে যায়। ব্যাংকে জেনারেল পদে অঙ্ক বেশি আসে। কিন্তু প্রস্তুতি একই রকম।
    আইন কর্মকর্তা পদের লিখিত পরীক্ষায় সম্পত্তি সম্পর্কিত আইন ও ব্যবসায় আইন থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। জুডিশিয়ারিতে সম্পত্তি সম্পর্কিত পুরো ১০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা হয়। তাহলে জুডিশিয়ারি প্রস্তুতির পড়া                             আইন কর্মকর্তা পদে কাজে লাগছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি পড়তে হচ্ছে ‘ব্যবসায় আইন’।

    আইন কর্মকর্তা পদের পরীক্ষায় সাধারণ বিষয়ে যে অল্প কিছু প্রশ্ন আসবে, জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি থাকলে তা সহজেই উত্তর করা যাবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সময়জ্ঞানকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে। কারণ এই নিয়োগ (আইন কর্মকর্তা) পরীক্ষায়                             অল্প সময়ে টু দ্য পয়েন্টে তুলনামূলক বেশি লিখতে হয়!
    এবার আসি টপিক নির্বাচনে। যেমন—বাংলায় জুডিশিয়ারি সিলেবাসে কিছু কবি-সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ আছে। বিসিএসে এর চেয়ে কিছুটা বেশি আছে। বিসিএসের সাহিত্য অংশে আদি যুগ ও মধ্যযুগ থাকলেও জুডিশিয়ারিতে এদিক থেকে তেমন প্রশ্ন আসে না। তাহলে এখানে আপনাকে অবশ্যই আগে জুডিশিয়ারির বাংলা সিলেবাস শেষ করে সময় পেলে বিসিএসের বাদ পড়া টপিক পড়তে হবে।
    প্রায় সব নিয়োগ পরীক্ষায় মৌলিক বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। এসব বিষয়ে একবার                          কষ্ট করে জোরালো প্রস্তুতি নিতে পারলে নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে ভালো করা যাবে।

    ♦ মৌলিক জ্ঞান বাড়াতে হবেঃ
    বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর শুদ্ধভাবে বাংলা-ইংরেজিতে লিখতে পারা; গণিতের বেসিক অপারেশন যেমন—যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ                                  ইত্যাদি সমাধান করতে পারা এবং বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতীয় পর্যায়ের সুবিধা-অসুবিধা, চ্যালেঞ্জ, টার্গেট, চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা সাধারণ বেসিক বা মৌলিক জ্ঞানের মধ্যে পড়ে।
    ♦ মৌলিক জ্ঞান বাড়ানোর উপায়ঃ
    ১। নির্ভরযোগ্য পত্রিকার অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ও মতামত পাতায় মনোযোগ দিন। পুরো পত্রিকায় চোখ বুলান। এতে আপনি আপডেটেড হয়ে যাবেন। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকার প্রিন্টেড বা অনলাইন ভার্সন                                    থেকে ন্যূনতম একটি খবর জোরে রিডিং পড়ুন। পত্রিকার খবর থেকে নতুন নতুন বাক্য বিন্যাস ও শব্দ খাতায় লিখে শিখুন। শেখা বাক্যের কাঠামো ও শব্দ বাস্তবজীবনে ব্যবহার শিখুন। টিভিতে খবর দেখুন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখুন।

    ২। পত্রিকা বা বই পড়ার সময় বইয়ের দিকে তাকিয়ে মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন। এতে বানান ঠিক হয়ে                      যাবে এবং বাক্য গঠন সুন্দর হবে। এই পর্যায়ে বানান ভুলের কারণে লিখিত পরীক্ষায় নম্বর একেবারে কমে যায়।
    ৩। সুযোগ পেলে স্বীকৃত জ্ঞানী বা বিখ্যাত লোকদের বক্তব্য শুনুন। বিতর্ক দেখুন। জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে নজর রাখুন। মনে রাখবেন,                            তাঁরা যা বলছেন, দেশের মধ্যে সেসবই ঘটছে!
    ৪। একই পড়া একই বই থেকে বারবার না পড়ে আলাদা আলাদা বই পড়ুন।
    ৫। বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও মৌলিক সাধারণ জ্ঞানের জোরালো প্রস্তুতি নিন।

    ৬। দৈনিক কার্যক্রমের যোগ, বিয়োগ, ভাগ, পূরণ ক্যালকুলেটর ছাড়া করুন। যেখানে-সেখানে কলম                       চালানোর অভ্যাস করুন। যত ধরনের অঙ্ক আছে, তার মূল কিন্তু যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। শুধু শিখতে হয় কখন কোনটা করতে হবে!
    ৮। যেটা যতটুকু পড়বেন, বুঝে পড়বেন, যেন চাইলেই সেসব টপিক নিয়ে জড়তা ছাড়া কমপক্ষে দুই মিনিট অনর্গল সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে পারেন।
    এভাবে ধাপে ধাপে পড়তে থাকলে এটাই আপনার পুঞ্জীভূত                   জ্ঞানে পরিণত হবে, যা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় কাজে লাগবে।

    তথ্যসূত্রঃ ডেইলি কালের কন্ঠ (১ মে, ২০২১)