




নূরুন্নাহার সাথী পড়াশোনা করেছেন খুলনা বিশ্ব’বিদ্যালয়ে। HCS-তে পড়াশোনা করার সময়ই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। তবে বিয়ের পরও তার স্বপ্ন থেমে যায়নি। স্বামীর অনু-প্রেরণায় সংসার সামলেও তিনি স্বপ্নজয় করে নিয়েছেন। প্রিলিতে একবার ফেল করেছিলেন। তাই জেদের বশে পড়া’শোনা করে ৩৮তম বিসিএসে ফরেস্ট্রি ক্যাডারে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন সাথী।





বর্তমানে তিনি প্রধান’মন্ত্রীর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক পদে কর্ম-রত আছেন।
জানা গেছে, সাথীর জন্ম ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপ’জেলার শিবনগর গ্রামে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. হামিদুল ইসলামের মেয়ে তিনি। স্বামী মো: মাহবুবুর রহমান উপজেলা রিসোর্স সেন্টা’রের ইন্সট্রাক্টর। ছোটভাই নাইম পারভেজ রাজু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যা*লয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ছেন।
সাথী বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে GPA ৪ দশমিক ৯৪ পেয়ে ২০০৬ সালে SSC পাস করেছেন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে HSC-তে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন।





সাথী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। উচ্চ মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে পারিবারিক-ভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন সাথী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম-বর্ষেই ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সাথী।
ছেলে ফাইয়াজ সাদিত বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। সংসার সাম’লানোর সাথে সাথে যোগ হয় আরও বড় দায়িত্ব সন্তানকে দেখাশোনা করা। তবে কখনো হাল ছেড়ে দেননি। এতসব দায়িত্ব পালনের পাশা’পাশি ঠিকমত কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
সাথী মাস্টার্সের প্রথম-বর্ষ থেকে অল্প অল্প বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন এবং মাস্টার্স শেষ করার পর পুরোপুরি’ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি।





সারাদিন সংসারের কাজ শেষে রাতের বেলা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতেন। এর আগেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক’ভাবে প্রস্তুতির অভাবে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এরপর অসম্ভব জেদ চেপে যায়।
যেভাবে হোক বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া চাই। এমনটাই দৃঢ় মনো’বল নিয়ে প্রস্তুতি নিই। যার ফলে ৩৮তম বিসিএস এ সফল হই। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩৮তম বিসিএস তৃতীয় সরকারি চাকরি।
সাথী জানালেন, “তার ওই সফলতার পেছনে প্রেরণা দিয়েছেন স্বামী মো. মাহবুবুর রহমান। পড়াশোনা শেষ করা থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া সবকিছুতেই সফলভাবে অবদান রেখে গেছেন তার স্বামী।





রাতের নিরিবিলি সময়ে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত তখন সবচেয়ে বেশি চাকরির প্রস্তুতি নিতেন। পড়াশোনার সময় তার স্বামী বাচ্চাকে দেখাশোনা করতেন এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতেন। যখনই কোন হতাশা তাকে ঘিরে ধরত তখন তার স্বামী এভাবেই উৎসাহ দিত- তুমি পারবে, তোমাকে দিয়ে হবে, কখনো হাল ছেড়ো না, ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবে।“
যারা বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে বলেন, প্রচুর পড়া’শোনার পাশাপাশি কষ্ট করতে হবে। মন প্রাণ দিয়ে সৃষ্টি’কর্তার কাছে চাইতে হবে। সিলেবাস ধরে রুটিন বানাতে হবে এবং রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনের পড়া-শোনা প্রতিদিন শেষ করতে হবে।





যে বিষয়ে নিজেকে দুর্বল মনে হবে সেটা অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রতিদিন রুটিনে রাখতে হবে। রিভিশন খুব গুরুত্ব*পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য। বার বার রিভিশন দিতে হবে।
১-২ বার পড়লে অনেক সময় পড়া মনে থাকে না তাই বার’বার রিভিশন দিতে হবে, এভাবে পড়লে মনে থাকবে। এছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও টিভির সংবাদ দেখতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।
পরীক্ষার আগে বাসায় বেশি বেশি মডেল টেস্ট পরীক্ষা ও রিভিশন বেশি দিতে হবে, তাহলে সময় কম নষ্ট হবে।





রিটেনের আগে প্রচুর লেখার অনুশীলন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।