Fri. Jun 9th, 2023

    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ময়মন’সিংহের আনন্দ মোহন কলেজে পড়াশোনা করেন রহিমা সুলতানা। অনার্স  দ্বিতীয় বর্ষেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। স্বামী শিবলী নোমান কাতার আওকাফে চাকরি করেন। তাই বিয়ের পর সুলতানাকে কাতা’রে চলে যেতে হয়। ২০১৪ সালে কন্যা-সন্তানের জন্ম হয় তার। এ অবস্থায় পড়া’শোনায় ভাটা পড়ে রহিমা সুলতানার। দেশের বাইরে থাকায় অনা*র্সের ক্লাস করতে পারেননি তিনি। পরীক্ষায় সময় হলে দেশে আসতেন।

     

    এভাবে পড়া’শোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হলেও থেমে থাকেন’নি রহিমা সুলতানা। এবার ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ-প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এর আগে ৩৭তম বিসিএসে নন ক্যাডার পান তিনি। বর্তমানে সাব-রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্ম’রত আছেন রহিমা সুলতানা।                                                     জানা গেছে, নেত্র’কোনার মদন উপজেলার ফতেহ’পুর গ্রামে জন্ম রহিমার। তিন ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে সুলতানা পঞ্চম। বাবা আলী আকবর ভূঁঞা ছিলেন পোস্ট মাস্টার (অবসরপ্রাপ্ত)। বাবা সরকারি চাকরি’জীবী হওয়ায় বিভিন্ন সময় ট্রান্স’ফারের কারণে শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায়।

     

    রহিমা সুলতানা বলেন, “HSC পরীক্ষা দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যা’লয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যা’লয়ে বিবিএর ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষা*রত তালিকায় ছিলাম। সেখান থেকে আর ডাক পাইনি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই আর অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যা’লয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেইনি। পরিবারের কথায় আনন্দ মোহন কলেজে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হই।”

    সুলতানা বলেন, “আমার শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। স্বামী বিদেশে আছেন। আমি ছোট ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার এক মাস আগে একজন বন্ধুর কাছ থেকে কিছু বইয়ের নাম জেনে তা কিনে দিনরাত পড়াশোনা শুরু করি। তখন আমি ঘরের কাজ এবং মেয়ের যত্ন ছাড়া এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করিনি। মেয়েকে কোলে নিয়ে সারা’ক্ষণ পড়াশোনা করেছি।     তখন প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। তারপর ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রায় দুই-তিন মাস পাই। এরই মধ্যে মেয়ে অসুস্থ হয়। এজন্য ভারতে চলে যেতে হয় আমাকে। সেখানে যাও’য়ার কারণে সময় নষ্ট হয়।

     

    রহিমা সুলতানা আরো বলেন, “আবার লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে এসে ১২ দিন আগে আমার ভগ্নিপতি দুর্ঘ*টনায় মারা যান। এটা ছিল আমাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। তখন আর পড়াশোনা করতে পারিনি। ভাবলাম লিখিত পরীক্ষা আর দেব না। পরিবার বললো চেষ্টা করতে হবে। তারপর পরীক্ষা দিয়েছি।

    বিষয় আর দেয়া হয়নি। তার আগেই কাতার চলে যাই। কিছু মাস পর লিখিত পরীক্ষায় পাস করি। তখন আমার মৌ’খিক পরীক্ষা ছিল ডিসেম্বর মাসে। এর মধ্যে ৩৮-তম BCS পরীক্ষার জন্য আবেদন করি। কিন্তু দেশের বাইরে থাকায় আমার হাতে কোনো বই ছিল না। সেখানে আবার ৩৮তম প্রিলির তারিখ ছিল জানুয়ারি মাসে। তাই অনলাইন থেকে সব বই দেখে দেখে আবার পড়া*শোনা শুরু করেছি। তারপর ৩৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার জন্য এবং দেবরের বিয়ে উপলক্ষে দেশে আসি।

     

    তারপর জানুয়ারিতে ৩৮তম প্রিলির পরীক্ষা দিয়ে কাতার চলে যাই। এরপর ৩৭তম পরীক্ষার ফলাফলে আমি নন ক্যাডার সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পাই।

    তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ টাইমস