




চাঁপাই-নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল থেকে ২০০৯ সালে SSC ও ২০১১ সালে রাজশাহীর নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে HSC পাস করি। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যা’লয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময়ই মূলত BCS”র প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়। ২০১৭ সালে গ্র্যাজু’য়েশন শেষ করেই শুরু করি BCS প্রিলির প্রস্তুতি। আর বিসিএসে ক্যাডার চয়েসে আমি ‘পুলিশ’কেই প্রথম পছন্দ হিসেবে নির্বাচন করি।





এই পরীক্ষা যেহেতু খুবই প্রতিযোগিতা-পূর্ণ, তাই কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে প্রস্তুতির পরিকল্পনা ঠিক করি। প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বিসিএসের প্রিলিতে আসা সব প্রশ্ন ১-বার করে পড়ে নিই। প্রিলির প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাই।
তারপ’রের কাজ হিসেবে ‘কোন কোন বিষয়ে আমার দুর্বলতা আছে’ সেটি খুঁজে বের করি। আমার দুর্বলতা ছিল মূলত বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য, বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক বিষ’য়াবলি, জীববিজ্ঞান—এসব বিষয়ে। তাই প্রথমেই এগুলো জোর দিয়ে পড়া শুরু করি।
বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রথমেই কয়েকটি অংশ ভাগ করে নিয়ে’ছিলাম—বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে কোনগুলো নাটক, কাব্যগ্রন্থ, ছোটগল্প, প্রবন্ধ কিংবা কবিতা এবং সেগুলোর লেখকের নাম ইত্যাদি। এগুলো খাতায় তালিকা করে লিখে নিয়ে মাঝে মাঝে রিভিশন দিতাম। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য অংশের জন্য গাইড বই অনু’সরণ করাটাই যথেষ্ট মনে হয়েছে।





বাংলা ব্যাকরণের জন্য মাধ্য’মিক শ্রেণির বোর্ড বই আর গাইড থেকে পড়েছি। ইংরেজির প্রস্তু’তিতে ইংরেজি সাহিত্যের যুগ বিভাগ, বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন গুরুত্ব-পূর্ণ সাহিত্যিক, গুরুত্বপূর্ণ কিছু কোটেশন, সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টার্ম পড়েছি এবং রিভিশনের জন্য বিভিন্ন সাহিত্যের লেখকদের একটি তালিকা তৈরি করেছি।
যেসব বিষয়বস্তু গতানু*গতিক অর্থাৎ যে তথ্য পরিবর্তিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, সেগুলো প্রথমে মুখস্থ করি। যেমন—বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ বিষয়াবলির মধ্যে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ইত্যাদি।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির মধ্যে বিভিন্ন দেশের পরিচিতি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ইত্যা’দির খুঁটিনাটি নিয়ে পড়াশোনা করি। টিউশনি করার কারণে গণিত ও বিজ্ঞানের ওপর ভালোই চর্চা ছিল। প্রিলি পরীক্ষার দুই মাস আগে সাম্প্রতিক তথ্য*সংবলিত বই কিনে পড়েছি। পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়ারও চেষ্টা করেছি।





গণিত প্রস্তুতির জন্য মাধ্য’মিক শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিতের বোর্ড বই সমাধান করেছি। এ ছাড়া গণিত ও মানসিক দক্ষতার জন্য বিগত সব বিসিএসে আসা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা অঙ্ক’গুলোও দেখেছি। বিজ্ঞানের জন্য মাধ্যমিকের বোর্ড বইয়ের পাশা’পাশি গাইড বই থেকে পড়েছি। ঠিক পরীক্ষার আগে শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে ডাইজেস্ট বই থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি।
প্রিলির প্রস্তুতির জন্য সংশ্লিষ্ট বই কয়েক*বার রিভিশন দেওয়ার পর জব সলিউশন ধরে শেষ করেছি। একইভাবে রিটেনের জন্যও সব বই একবার করে রিডিং দিয়ে মোটামুটি ধারণা নিয়ে এরপর শুধু রিভিশন দিয়েছি।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। প্রিলির পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার সময় আমি সব শেষে গণিত ও মানসিক দক্ষতার উত্তর করে*ছিলাম। কারণ এই দুটি বিষয়ের উত্তর করতে হয় চিন্তা-ভাবনা ও ক্যালকুলেশন করে। তাই এখানে সময় একটু বেশি লাগে।





‘সুশাসন ও মূল্যবোধ’ বিষয়ের প্রশ্নের উত্তরগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক কনফিউ’জিং থাকে। তাই একেবারে নিশ্চিত না হয়ে এগুলোর উত্তর করিনি। আর যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না, সেগুলোর পেছনে সময় নষ্ট না করে এড়িয়ে গেছি, যাতে গণিত ও মানসিক দক্ষতার উত্তরে যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
লিখিত পরীক্ষায় (আগস্ট ২০১৮) অংশ নেওয়ার আগেই পরীক্ষার কেন্দ্রে সময় ব্যবস্থাপনা বা বিভাজন কেমন হবে, সেটা ঠিক করেছি। কোন প্রশ্নের উত্তর লেখায় আমি কত সময় দেব, সেটা বাসায় প্রস্তুতির সময়ই মূল্যায়ন করেছি। উত্তর দেওয়ার সময় প্রশ্নের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ও তথ্যবহুল কি না—খেয়াল করার পাশাপাশি ভাষাগত ভারসাম্য, শব্দচয়ন ও বানান ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি।
লিখিত পরীক্ষা শেষে আমি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে যোগ দিই। সারা দিন অফিস করার পর রাতে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।





প্রিলি-রিটেনের মতো মৌখিক পরীক্ষায়ও (নভেম্বর ২০১৯) ভালো করি। এ বছরের (২০২০) জুনে ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, পুলিশ ক্যাডারে (দ্বিতীয় স্থান) সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বিসিএস।
শ্রুতলিখন : এম এম মুজাহিদ উদ্দীন