Thu. Jun 1st, 2023

    রিক্তা খাতুন; ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তিনি খুলনার রূপসা উপ’জেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুর রব এবং মা নাছিমা বেগম। রূপসা উপজেলার গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে SSC, খুলনা সদর                     সবুরুন্নেসা ডিগ্রি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে HSC এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

    বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজি’স্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে।

     

    জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

    রিক্তা খাতুন: ছোটবেলায় বেশ ডান’পিটে ছিলাম। তবে একটু ভাবুক প্রকৃতিরও। নোটবুক থেকে গৎবাঁধা মুখস্থ করাটা আমার ভালো লাগত না। সবকিছু দেখে নিজের মত করে লেখার একটা চেষ্টা ছিল সব সময়।

    পড়াশোনার পাশা’পাশি স্কাউটিং, Debate, একক অভিনয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতি;যোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। কবিতা লেখার একটা ঝোঁক ছিল সব সময়। খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ কাব স্কাউট ছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে                বেশি সক্রিয় থাকার কারণে উপজেলায় বেশ পরিচিত ছিলাম।

     

    *পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?

    রিক্তা খাতুন: পড়াশোনায় তেমন কোন প্রতি;বন্ধকতা ছিল না। তবে ছোটবেলায় একটা দুর্ঘ’টনায় আমাদের পারিবারিক অবস্থা           মারাত্মক-ভাবে খারাপ হয়ে যায়। তখন বেশ বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার কারণে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষম’তাটা ছোটবেলা থেকেই রপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

    * বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?

    রিক্তা খাতুন: অনার্স শেষ করার পর একটি বে-সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। তখন মাস্টার্স করছি, পাশাপাশি চাকরি চলছে। অফিসে কয়েকজন কলিগকে দেখতাম               চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের জন্য খুব পড়াশোনা করতেন। প্রাইভেট চাকরির কষ্টের মাঝে তাদের এত পড়াশোনা করা দেখে আমি BCS দেওয়ার চিন্তা করি। মূলত তখন কলিগ-দের চেষ্টা দেখেই BCS নিয়ে মনে একটা ভাবনার জগৎ তৈরি হয়। যেটা থেকে বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।

     

    জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প কেমন ছিল?

    রিক্তা খাতুন: চাকরিতে থাকা অবস্থায় কলিগদের দেখে ৩৬তম বিসি’এসে প্রথম আবেদন করি। চাকরিতে থাকা;কালীন পড়ার           তেমন একটা সুযোগ হতো না। তবে কাজের পাশাপাশি যতটুকু সময় পেতাম পড়া’শোনা করতাম। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় বিজ্ঞানে ভালো ছিলাম।

    বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান আর মাঝে মাঝে পুরোনো প্রশ্নগুলো ঝালাই করা- এটুকুই প্রস্তুতি নিতে পারতাম। প্রিলিতে টিকে যাওয়ার পর একটা গার্লস স্কুলে                     বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সেখান থেকে বিজ্ঞানের বিষয়-গুলোর চর্চা হয়ে যেত। সময় বের করে অঙ্ক, আন্ত’র্জাতিক ও সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা দেখার চেষ্টা করতাম। যা হোক, প্রিলি-লিখিত আর ভাইভায় টেকার পর ৩৬তম বিসিএসের Result ঘোষণা হয়।

    যাতে নন-ক্যাডার আসে; তখন হতাশ না হলেও মন খারাপের অনুভূতি তো ছিলই। নন-ক্যাডার হিসেবে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগদান করি।

     

    বিভিন্ন কারণে ৩৭তম বিসিএস দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলি;মিনারি ও লিখিত দেই। কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশ হয় এবং উত্তীর্ণ হই। উত্তীর্ণের পর মনে হলো, আরও একবার চেষ্টা করা উচিত। কারা’গারের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর পর আমি খুব কম সময় পেতাম। বন্দি’দের দেখার পর                  যখনই সময় পেতাম, বই উল্টে উল্টে পড়তাম। ১৬-১৮ ঘণ্টা পড়ার সুযোগ আমার কখনোই ছিল না।

    আমি আমার দুর্বলতাগুলো খুঁজে সেগুলো নিয়ে পড়া’শোনা করতাম। ভাইবায় যে বিষয়-গুলোয়               জোর দেওয়া জরুরি, সেগুলো বেশি পড়ি। সব সময় আত্নবিশ্বাসী ছিলাম, কেউ না পারলেও আমি পারবো। আল্লাহর অশেষ রহমতে ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেলাম।

    * কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?

    রিক্তা খাতুন: আমি বরাবরই জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। তবে ডেপুটি জেলার হিসেবে থাকা অবস্থায় সমাজের অন্ধকারে                    হারিয়ে যাওয়া মানুষ*গুলোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ দেখে মনে হচ্ছিল, আরও বড় পরিসরে জনস্বার্থে কিছু করা দরকার।

     

    এমন পরিবেশ তৈরি করবো, যাতে মানুষকে আর কারা’গারে আসতে না হয়। তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কষ্ট                       আমার কোন’দিনই সহ্য হয়নি। মনে হতো সবকিছু বদলে আলোর পৃথিবী গড়ি। হয়তো এতবড় কাজ আমি একা করতে পারবো না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কী? যদি একজন মানুষকে খারাপ পথ থেকে আলোর দিকে আনতে পারি, এটাই সার্থকতা।

    জাগো নিউজ: কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি?

    রিক্তা খাতুন: আমি কাজের ক্ষেত্রে বরা’বরই আত্মবিশ্বাসী। পাছে লোকে কিছু বলে এগুলো একদম কানে নেই না। আশেপাশের লোকজন মাঝেমধ্যে হয়তো বলতো, আমি পারব না। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি যে,                নারী বলে কোনো কাজে আটকে গেছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে গেছি। যারা ভেবেছিলেন আমি পারবো না, ইনশাআল্লাহ তাদের ধারণা পরিবর্তন করতে পেরেছি।

     

    * আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

    রিক্তা খাতুন: ছোটবেলা থেকেই জীবনের সাথে অনেক লড়াই করে এসেছি। অসহায় ও দিন;মজুর মানুষের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। অধিকার*বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের মাঝে                  সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই। যতদিন সার্ভিসে থাকবো, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে চাই। সাধারণ মানুষের জীবন’মান উন্নত করতে পলিসি মেকিংয়ের অংশ হতে চাই।

    *যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?

    রিক্তা খাতুন: সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের ভুল-ত্রুটি ও দুর্বলতা খুঁজে              বের করে অনুশীলন করতে হবে। নিজের দুর্ব’লতা নিজে যতটা বের করা যায়, অন্যরা ততটা পারেন না। আত্ম’বিশ্বাস থাকাটা জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে, আমি পারবই।

     

    তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিসিএস ছাড়াও বিকল্প অপশন প্রস্তুত রাখতে হবে। জীবনের জন্য বিসিএস, বিসিএসের জন্য জীবন নয়।

    News Source: Jago News