Sat. Sep 23rd, 2023

    বিজ্ঞান, বাণিজ্য, মানবিককে কোন বিষয়ে পড়ছি সেটা জরুরি নয়। এর চেয়ে প্রয়ো’জন আমি যা নিয়ে পড়ছি— তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি নিজেকে নিয়ে যেতে পারি কিনা। সব বিভাগে থেকেই জীবনে             ভালো কিছু করা যায়।

    বলছিলেন ঢাকা বিশ্ব;বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসমা জাহান সরকার। তিনি ৩৬তম বিসিএসে               প্রশাসন ক্যাডার হয়েছেন। তার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

     

    ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণ;বাড়িয়া জেলার নবীনগর উপ;জেলার আহাম্মদপুর গ্রামে                জন্মগ্রহণ করেন আসমা জাহান সরকার। ডাক নাম আসমা। বাবা আবদুল হান্নান সরকার একজন কৃষক, মা খোশনাহার বেগম একজন গৃহিণী। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে

    সবাই অত্যন্ত মেধাবী। তার অন্য ভাই বোন ও দেশে বিদেশে                   ভালো অবস্থানে আছেন। আসমা ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের                        সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া’শোনা করেছেন। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় জেলায় প্রথম স্থান লাভ করে ট্যালেন্ট’পুলে বৃত্তি পেয়ে সফল;তার সাথে প্রাথ’মিকের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন।

     

    ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে যান কুমিল্লার ঐতিহ্য;বাহী                   নবাব ফয়জুন্নেচ্ছা সর’কারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণীর সরকারী বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা জেলায় ৩য় স্থান লাভ করে ট্যালেন্ট’পুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। ভালো ছাত্রীর তকমা লেগে যায় তার গায়ে। পরি’বারের সদস্যরা স্বপ্ন দেখেন আসমা বড় হয়ে                      একজন ডাক্তার হবেন। সেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন।

     

    ২০০৮ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে GPA-5 পেয়ে মাধ্য’মিকের চৌকাঠ পার হন। বোর্ড বৃত্তিতে সম্মিলিত মেধা-তালিকায় স্থান হয় ১৯তমে। মাধ্য’মিকের গণ্ডি পার হওয়ার পরে                    আসমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ব’বিদ্যালয়ে আইন অথবা সামাজিক বিজ্ঞানের যে              কোন বিষয়ে পড়ে BCS ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পরিবারের অনেক সদস্যের আপত্তি সত্ত্বেও বুয়েটে পড়ুয়া আপন দুই ভাইদের সমর্থনে                    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ার কারণে সামাজিকভাবে মানুষের নানা কটূ কথাও শুনতে হয়েছে।

    মানুষের কটূ কথাগুলো সেদিন আসমা নিজের জন্য             চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। তখন থেকে মনের মধ্যে একটা জেদ তৈরি হয়েছিল। ভেবেছিলেন তিনি জীবনে এমন কিছু করবেন। যাতে তাকে সমাজে অন্য’রকম              মর্যাদায় আসীন করেন। সেই থেকে স্বপ্নের যাত্রা শুরু। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে               GPA_5 পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বোর্ডে সম্মিলিত মেধা’তালিকায় অবস্থান ছিল ৩য় স্থান অধিকার করেন।

     

    এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যা;লয়ের খ-ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ৩৭৪ তম হয়ে                 রাষ্ট্র-বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই পারিবারিক উৎসাহ আর নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে BCS’র জন্য মনো-নিবেশ শুরু করেন। ১ম বর্ষ থেকেই সাধারণ গণিত আর             ইংরেজির চর্চা করতেন নিয়মিত। তারপর ৩য় বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি                রুটিন করে নিয়মিত বিসিএসের সিলেবাস ধরে ধরে পড়া শুরু করেন।

    Preli-written দুইটা সিলেবাস একসাথে মিলিয়ে         পড়ার চেষ্টা করেছেন। আসমা বলেন, এতে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে লিখিত পরীক্ষার                 অনেক পড়াই আমার আয়ত্তে ছিল। যা লিখিত পরীক্ষায় আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল। আমার বিভাগের একাডেমিক অনেক পড়াশোনা              সরাসরি আমার বিসিএসের কাজে দিয়েছে। আমি বলব এটা ছিল আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।

    আসমা একাডেমিক পড়াশুনার পাশা’পাশি বিসিএসের জন্য পড়লেও ডিপার্টমেন্টের              পড়াশোনাও করেছেন রুটিন মেনে। সেটা তার ফলাফলেই প্রামাণ মেলে অনার্সে CGPA-৩.৫২ পেয়ে বিভাগে ৯ম স্থান লাভ করেন। মাস্টার্সে সিজিপিএ-৩.৭৫ পেয়ে ২য় স্থান অর্জন করেন। তারপর জীবনের প্রথম বিসিএস পরীক্ষা                  দিয়েই মেধায় প্রশাসন                ক্যাডারে সুপারিশ*প্রাপ্ত হয়েছেন।

     

    আসমা বলেন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, মানবিককে কোন               বিষয়ে পড়ছি সেটা জরুরি নয়। এর চেয়ে প্রয়োজন আমি যা নিয়ে পড়ছি— তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি নিজেকে নিয়ে               যেতে পারি কিনা। সব বিভাগে থেকেই জীবনে ভালো কিছু করা যায়।

    প্রথম বিসিএসে মেধায় প্রশাসন ক্যাডার প্রাপ্তির অনুভূতি কী? এমন প্রশ্নের জবাবে আসমা বলেন, আমাদের মতো উন্নয়ন’শীল দেশে আর্থ-সামাজিক                অবস্থা এমন যে একজন BCS ক্যাডার তার তিনটি প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন—বাবার প্রজন্ম, নিজের প্রজন্ম, পরের প্রজন্ম।

    বিসিএস প্রশাসন আমার কাছে আসলেই            একটি স্বপ্নের নাম ছিল। আর আমি আমার স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আর আজ আমার সেই            স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন আমাকে            নিজের আলোয় আলো’কিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করেছেন।

     

    এখন আমার আর একটি বড় স্বপ্ন আছে—আমি সচিব হতে চাই। আমার বাবা-মা, ভাই-বোনরা যেন আমাকে নিয়ে গর্ব করে                বলতে পারে আমাদের মেয়েটি আমাদের পরিবারকে, সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছে। সফলতা পেতে কোন বিষয়গুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে- জানতে চাইলে আসমা জানান, সুনিদিষ্ট লক্ষ্য, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস এই তিনটি                   আমাকে আজকের এই সফলতা এনে দিয়েছে।

    আসামার Public Policy আর সুশাসন এই দু’টি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা                   করার ইচ্ছে পোষণ করেন। নিজের একাডেমিক জ্ঞান’টাকে আমার পেশাগত জীবনে             কাজে লাগিয়ে এই দেশের সাধারণ মানুষের উপকার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।   আগামী দিনের BCS স্বপ্ন প্রত্যাশী’দের জন্য পরামর্শ দিয়ে                   আসমা বলেন, “আমার আহবান রইল— আপনারা আগে নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন।

     

    কঠোর পরিশ্রম করুন, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। আপনার স্বপ্নও          একদিন সত্যি হবে ইনশাআল্লাহ।”

    Source: The Daily Campus