Sat. Sep 23rd, 2023

    সাদিয়া আফরিনের জন্ম নওগাঁর সাপাহারে। বাবা মো. গোলাম কিবরিয়া পেশায় শিক্ষক। মা ইমরোজ জাহান ব্যাংক কর্মকর্তা। সাদিয়া রাজশাহীর                   পিএন গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল থেকে ২০০১ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৩ সালে রাজশাহীর নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

     

    জেনেটিক ইঞ্জিনিয়া’রিং অ্যান্ড বায়ো-টেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হন। পড়া’শোনা শেষে প্রথম শ্রেণির সর;কারি চাকরির মাধ্যমে কর্ম;জীবনে প্রবেশ করেন। সম্প্রতি তার BCS জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও              সফ’লতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে।

    জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

    সাদিয়া আফরিন: আমার ছোট’বেলা কেটেছে খুবই ভালো। ছোট;বেলার একদম              প্রথম কয়েক বছর গ্রামে কেটেছে। যখন বড় হয়েছি; তখন থেকেই শহরে। শহরে বড় হলেও মাঠে খেলতে পার’তাম। অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল।

     

    জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধতা ছিল কি?
    সাদিয়া আফরিন: না। পড়া’শোনার ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধ;কতা ছিল না। পরিবারের সবাই পড়াশোনার ব্যাপারে                    খুব যত্নশীল ছিলেন। বিশেষ করে আমার আব্বা-আম্মা খুবই উৎসাহ দিতেন। তারা বলতেন, আর যা-ই করো না কেন, পড়া;শোনাটা ঠিকভাবে করো।

    জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
    সাদিয়া আফরিন: বিসিএসের স্বপ্ন আসলে সেভাবে দেখিনি। স্বপ্ন দেখতাম, আমি চাকরি করবো। কারণ আমার আম্মা-খালারা                   সবাই চাকরি করতেন। আমিও ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম, আমি চাকরি করবো। বড় হয়ে আমার নিজস্ব একটি                আয় থাকবে, এটাই স্বপ্ন ছিল।

     

    জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
    সাদিয়া আফরিন: আমার BCS যাত্রা শুরু হয়েছে অনার্সের পর। মাস্টার্স-কে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ আমি অনার্সে              ফার্স্ট ক্লাস ফোর্থ ছিলাম। তাই মাস্টার্সে উঠে রেজাল্ট ভালো করার ইচ্ছা ছিল। তবে আমার খুব কাছের কয়েক*জন বন্ধুর সাথে               বিসিএস কোচিংয়ে ভর্তি হই। তখন ক্লাসে যেতাম, স্যারে’রা যা বলতেন শুনতাম। তবে খুব বেশি সিরিয়াস

    ছিলাম না। অঙ্কের টেকনিক*গুলো শুনতাম। বাসায় এসে কখনো প্রাক্টিস করা হতো না। এভাবে চলতে চলতে               ভালো লাগা কাজ করে। পড়ার মধ্যে আনন্দ পেতে শুরু করি। এর মধ্যে মাস্টার্সও শেষ হয়ে যায়। তখন আমি বিসিএসের জন্য সিরিয়াস হই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু বলেছিল, বিসিএসই একমাত্র জায়গা; যেখানে একজন মানুষের                  প্রকৃত মেধা যাচাই করা যায়। কথাটি খুব মনে ধরে।

    তখনই ঠিক করি নিজেকে যাচাই করবো। আমার মধ্যে জেদ কাজ করে,                     আমি পারি কি-না? তার প্রেক্ষিতেই BCS পরীক্ষা দেওয়া। আমার প্রথম BCS ছিল ৩০তম। তখন সিরিয়াস ছিলাম না। তাই প্রিলিতে টিকিনি। ৩১তম বিসিএসে একটা দুর্ঘটনা ঘটে।

     

    ওই প্রিলিতে আমি প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারিনি। এরপর ৩২তম BCS ছিল স্পেশাল। এটা শুধু নারী আর উপজাতি-দের জন্য। সেটা দিয়েছিলাম। প্রিলিতে টিকে যাই। রিটেনও দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষের তিনটি                      রিটেন দিতে পারিনি। শেষে ৩৩তম বিসিএসে সিলেক্ট হই।

    জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন?
    সাদিয়া আফরিন: ৩৩তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করি। এখন বগুড়ার সোনাতলা                     উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আছি।

    জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি ও ভাইভার ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন—
    সাদিয়া আফরিন: অনেকেই বলেন, রাজধানী আর মুদ্রার নাম পড়লেই BCS সম্ভব। আসলে বিসিএসের জন্য অনেক                 ধৈর্য নিয়ে পড়তে হবে। প্রিলি, রিটেনের জন্য বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী                     বাজারে মানসম্মত যেকোনো সিরিজের (১টি করে) বই সংগ্রহ করে বারবার পড়তে হবে। বিজ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিতের (৬ষ্ঠ-১০ম) বোর্ড বই দেখতে হবে। ভাইভার ধরন সম্পর্কে বলতে গেলে, ভাইভা হচ্ছে ভাগ্য। ভাইভায় নিজ জেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনার্সের বিষয়, সংবিধান,                        মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে ভালো করা সম্ভব।

     

    জাগো নিউজ: কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
    সাদিয়া আফরিন: বিসিএসের অনু’প্রেরণা পেয়েছি বান্ধবী-দের কাছ থেকে। চাকরির জন্য অনুপ্রেরণা, নিজের পায়ে দাঁড়া;নোর অনু’প্রেরণা পরি-বারের কাছ থেকেই ছিল। তবে বান্ধবীরা একে অপরকে                    BCS’র জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

    জাগো নিউজ: নারী হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধতা আছে কি?
    সাদিয়া আফরিন: আমি একজন নারী, তা কাজের সময় কখনো কনসিডা-রেশনে আসেনি। নারী চিন্তা করে কখনো                    কোনো কাজ করিনি। প্রশাসন ক্যাডারে নারী হিসেবে আমাকে কেউ কখনো আলাদা করে সুবিধা দেননি। আমিও আলাদা করে                কোনো সুবিধা চাইনি। নারী হিসেবে যেটা প্রথম ফেস করেছি, তা হলো

    দফতর প্রধান হিসেবে কাজ করা। প্রথম এসিল্যান্ড হিসেবে জয়েন করি। প্রথম কর্মস্থল ছিল সাতক্ষীরা সদর। সেখানে আমার আগেও নারী এসিল্যান্ড থাকায়                    তেমন সমস্যা ফেস করতে হয়নি। তবে লালপুর, নাটোরে আমি প্রথম নারী হিসেবে যোগ দেই। সেখানে যে ব্যাপারটি হয়েছে, ফিল্ডে কাজ করতে                  গিয়ে সবাই আমাকে নারী হিসেবে ট্রিট করতে চান।

     

    তাদের মধ্যে একটি জিনিস কাজ করে, এ তো নারী; এ তো কিছু বোঝেন না। তবে আমি নারী হিসেবে যেটা                  ফেস করছি, নিজেকে নারী হিসেবে সার্ভিসে না ভাবলেও লোকজন প্রথমেই আমাকে নারী হিসেবে ট্রিট করে। কিন্তু এটা তো উচিত নয়। ইউএনও নারী না

    পুরুষ এটা তো বিষয় নয়। এটাই প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করি। এ থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে, আমাদে              র সামাজিক শিক্ষা-দীক্ষা মেনে চলতে হবে। সমতার যুগে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। কে নারী, কে পুরুষ এটা ভাবলে চলবে না।

    জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
    সাদিয়া আফরিন: যদি চাকরির ক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা বলেন, তাহলে বলবো চাকরি করতে করতে                   চাকরিকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই চাকরি করে যেতে চাই। এ চাকরির ক্ষেত্রে

     

    নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ              দেশে পরিণত হবে, যার প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।

    তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪