




…………………………





কনকচন্দ্র সাহা। টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে কাজ নেনে মুদি দোকানে। তবে স্বপ্ন তার থেমে থাকেনি। ছেলের ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওই চিন্তা করে বাবা শম্ভুচন্দ্র সাহা সাহসী পদক্ষেপ নেন। অভাবের সংসারে থেকেও ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। তবে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ চলে গেছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ভরসা।
……
ভালো ফল করে ওয়েভারের নেশায় ভর্তি হলেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে অভাববনীয় সাফল্যের জন্য তিনি পেলেন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। তাক লাগিয়ে দিয়েছে কনকের ওই সাফল্য। ছোটবেলা থেকেই কনক লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন। ফুফু তাকে ছোটবেলা থেকে পড়িয়েছেন। দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করিয়েছেন কনককে। এভাবে এসএসসিতে কনক জিপিএ ৪.৫০ পান। এইচএসসিতে ৪.৭০ পেয়েছেন। বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করলেও কনক মুদি দোকান নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন।





…………………………





অবশেষে বাবার সাহসে তিনি ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরেরটা যেন একটি নতুন ইতিহাস। গ্রাম থেকে আসা পাঁচজনের দলে থাকলেন কনক। ইউটিউব দেখে প্রেজেন্টেশনের স্লাইড বানালেন। খুব খেটে প্রেজেন্টেশন তৈরি করলেন।
বাহবা পেলেন বেশ। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে তার পরিবেশ বদলে গেল। পরীক্ষার আগে তার খাতা বন্ধুরা ফটোকপি করে নেওয়া শুরু করলেন। কনক প্রথম সেমিস্টারে জিপিএ চারের মধ্যে চার পেলেন। এরই মাঝে ঢাকার দূষিত পানি খেয়ে তিনি টাইফয়েডে পড়ে গেলেন। বাড়ি গিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। প্রথম সেমিস্টারে ভালো ফলাফলের কারণে ৫০ শতাংশ ওয়েইভার পান কনক। আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায় তার। পড়াশোনা আরো বাড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় সেমিস্টারেও পেলেন চারে চার! এবার ৬০ শতাংশ ওয়েইভার! ব্যক্তিগত কম্পিউটারের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পড়েন। কোনো দিন জায়গার অভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। অদম্য ইচ্ছা আর অধ্যবসায়ের ফলে ১০ম সেমিস্টার পর্যন্ত প্রায় সব কটিতে চার জিপিএ ধরে রেখেছেন কনক। একমাত্র ‘বিজিনেস রিসার্চ অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’ ভালোভাবে বুঝতে না পারায় এ গ্রেড পেয়েছেন। ফলে কনকের চূড়ান্ত সিজিপিএ হয় ৩.৯৮। ওই ফলাফলের কারণে তিনি সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ সমাবর্তনে ‘চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন।