বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাও’য়ার মতো ভালো কোনো পোশাক ছিল না ছেলেটির। ছিল না সকালের খাবার। চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো দিন সকালে নাশতা করেন’নি।





কোন বেলা খেয়ে আবার কোন বেলা আধ’পেট খেয়ে চলেছে জীবন। গায়ে ওঠেনি ভাল কোন পোষাক। অন্যের দেয়া পুরানো কাপড় গায়ে দিয়ে তার দিন চল’তেন। তখন এক বন্ধু পাশে এসে দাঁড়ায়।
কিন্তু জীবন তাঁর থেমে থাকেনি। অক্লান্ত পরি’শ্রম আর মেধা তাঁকে জীবন যুদ্ধে এনে দিয়েছে সাফ’ল্যের স্বর্ণ*মুকুট। তিনি প্রমান করেছেন, ইচ্ছা আর সাধনা থাকলে জী’বন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়।
হুম, জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া সেই ছেলেটিই আজ BCS ক্যাডার।





শুধু দুপুরের দিকে পাঁচ টাকা দামের একটা পাউ’রুটি খেয়ে দিন পার করতেন। সেই ছেলেটিই আজ BCS ক্যাডার। শুনুনু তাহলে অদম্য সেই ছেলেটির গল্প-
আবু সায়েমের বাড়ি কুড়িগ্রামে। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতেন। সে আয়ে তিন*বেলা ভাত জুটত না। বাড়তি আয়ের জন্য মা কাঁথা সেলাই কর’তেন। তারপর সে কাঁথা বাড়ি বাড়ি বিক্রি কর’তেন। কত দিন কত রাত সায়েম যে না খেয়ে কাটি’য়েছেন, সে হিসাব নিজেও জানেন না।
আজ সায়েমের কষ্টের দিন ঘুচেছে। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সমাজকল্যাণে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। কথায় কথায় শৈশবের দিনে ফিরে গেলেন সায়েম, ‘আম্মা খুব ভোরে উঠে অন্য মানুষের পেয়ারাগাছের তলা থেকে বাদুড়ে খাওয়া পেয়ারা কুড়িয়ে আনতেন। ওই পেয়ারা ছিল আমাদের সকালের নাশতা।’





তাঁদের ঘরের সামনেই ছিল পেঁপে’গাছ। ভাতের জোগাড় না হলে কাঁচা-পাকা পেঁপে খেয়েই থাকতে হতো। চাল না থাকায় একবার নাকি তাঁর আব্বা খেত থেকে কলাই তুলে আনেন। সেই কলাই ভাজা খেয়েই শুরু হয় তাঁর পেটজ্বলা। অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভাগ্যগুণে সে যাত্রায় বেঁচে যান সায়েম।
এভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে, অসুস্থতায় কাটত দিনগুলো। তবু পড়া’শোনা চালিয়ে গেছেন, ছাড়েননি সায়েম। মাধ্য’মিকের ভালো ফলের ধারা ধরে রাখলেন উচ্চমাধ্যমিকেও। SSC পরীক্ষার পর গ্রামের একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়েছেন কিছুদিন।





সায়েম বলেন, ‘ক্লাস করিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা পেলাম। সেই টাকা’তেই ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। ভর্তির সুযোগ পেলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ ছাত্র পড়িয়ে চলল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আর বেঁচে থাকার লড়াই।
সে লড়াইয়ে জয়ী হলেন সায়েম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে BCS পরীক্ষা দিলেন। এরপরের গল্প আর নাই বা বললাম! আজ সেই সায়েম বাবা মায়ের গর্ব।
সায়েম বলেন, ‘মা অন্যের কাঁথা সেলাই করে দিতেন। প্রতি কাঁথা হিসেবে মজুরি পেতেন ৭০ থেকে ১০০ টাকা।





মায়ের ১০টি আঙুলে জালির মতো অজস্র ছিদ্র। আজ আমার মায়ের জীবন সার্থক।’
®Worthytalkbd.com