বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী। সংসারের পরিধিটাও ছিল ব্যাপক। নয় ভাই-বোনের বড় সংসার একা টেনে নিয়ে’ছিলেন বাবা। সবাইকে করেছেন শিক্ষিত। পরি’বারের সবাই গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী।





তিনি ছিলেন সবার ছোট। লেখাপড়ায় বেশ মেধাবী। ১ম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেই বাজিমাত করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম বারই সুযোগ হয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশে। কর্মজীবনেও সফল তিনি। এতক্ষণ যার কথা বললাম তিনি এসপি জিহাদুল কবির। তার সফলতার গল্প শোনাচ্ছেন রিফাত কান্তি সেন-
১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার কাজাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিহাদুল কবির। বাবা আহম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা আয়েশা গৃহিণী।
ছয় বোন ও তিন ভাইয়ের সংসারে জিহাদুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর্শকে বুকে লালন করে পথ চলেন। পড়াশোনা তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো।





তাই সব কিছুর উপরে পড়াশোনাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। খুব ডানপিটে স্বভাবের না হলেও ক্রিকেটের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তার। পাড়ার মাঠগুলো চষে বেড়াতেন।
পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। যেহেতু তিনি ছোট, তাই মনে সব সময়ই চিন্তা থাকতো তাকেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে।
১৯৯০ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে SSC পাস করেন। ১৯৯২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে HSC পাস করেন। ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ইন ফরেস্টি বিভাগে বিএসসি পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই জিহাদুল কবিরের ধ্যান-জ্ঞান ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া। কিন্তু বড় হয়ে ইচ্ছে বদলে মনযোগ দেন BCS পরীক্ষায়।





টানা দু’বছর ঢাকায় চার বন্ধুসহ বাসা ভাড়া নিয়ে দিন-রাত পড়তে থাকেন। অবশেষে প্রকৌশলীর বদলে হয়ে গেলেন BCS কর্মকর্তা।
বিসিএসের গল্প: পড়াশোনায় তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, একটা সময় সফলতা তাকে ধরা দিয়েছে। ২০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে প্রথম বারই সফল হয়ে গেলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিসিএসের আগে তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন। এসিএফ কক্সবাজারে। সেখানে দু’বছর কাজ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন পুলিশের এএসপি হিসেবে।





জিহাদুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘”আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি সম্মান পাবেন। সম্মান না করে সম্মান পাওয়ার আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বিশ্বাস করেন, যেখানে তিনি গিয়েছেন, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করেছেন। বিনিময়ে তিনি যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি সাধারণকেও ভালোবাসা দিয়েছেন।”
তিনি আরও জানান, “বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়াই তার বড় সফলতা। এছাড়া কর্মজীবনে মানুষের ভালোবাসাকেও সাফল্য হিসেবে দেখছেন।
কর্মজীবনে সফলতার মধ্যে পাবনায় চরমপন্থীদের উৎখাত করা। তিনি এ পর্যন্ত ৪টি জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে জনগণকে সেবা দিয়ে এসেছেন।”





জিহাদুলের প্রথম পোস্টিং হয় গৌরনদী সার্কেল (এএসপি) হিসেবে। এরপর সীতাকুণ্ড, ঢাকা মেট্রো, এসি ডিবি, এসি এমটি, এডিসি ট্রান্সপোর্টে কর্মরত ছিলেন। এরপরই আসে মিশনের পালা। ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য চলে যান আইভরি কোস্ট।
সেখান থেকে ফিরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকা মেট্রোর এডিসি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে আবার মিশনে চলে যান লাইবেরিয়া।
সেখানে থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় নিযুক্ত হন।





২০১২ সালে প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলায় নিযুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজবাড়ী, পাবনা হয়ে বর্তমানে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ
©Worthytalkbd.com