Thu. Sep 21st, 2023

    …………………………

    প্রার্থী বিজ্ঞানের হন বা না হন, উভয়ের ক্ষেত্রেই ‘সাধারণ বিজ্ঞান’ বিষয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই। বিষয়টিতে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে শুধু বিসিএসের প্রিলিমিনারিই না, লিখিত পরীক্ষায়ও কাজে লাগবে। এ বিষয়ে কিভাবে কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া যায়, পরামর্শ দিয়েছেন                                            ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার (প্রথম স্থান অধিকারী) মো. হালিমুল হারুন লিটন ও ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার মাহামুদুল হাসান পারভেজ। বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

    সাধারণ বিজ্ঞান সিলেবাসঃ  বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএস প্রিলিমিনারির সিলেবাস দিয়েছে। প্রস্তুতির শুরুতে সিলেবাস ভালো করে দেখে নেওয়া দরকার। সাধারণ বিজ্ঞানের তিনটি অংশ হচ্ছে—ক. ভৌত বিজ্ঞান (৫ নম্বর), খ. জীববিজ্ঞান (৫ নম্বর) ও গ. আধুনিক বিজ্ঞান (৫ নম্বর)।

    …………………………

    ♦ ভৌত বিজ্ঞান : পদার্থের অবস্থা, অ্যাটমের গঠন, মৌলিক কণা, কার্বনের বহুমুখী ব্যবহার, অম্ল, ক্ষারক, লবণ, পদার্থের ক্ষয়, সাবানের কাজ, ভৌত রাশি এবং এর পরিমাপ, ভৌত বিজ্ঞানের উন্নয়ন, চৌম্বকত্ব ও তড়িৎ চৌম্বক, তরঙ্গ ও শব্দ, তাপ ও গতিবিদ্যা, আলোর প্রকৃতি, স্থির ও চল তড়িৎ,                                            ইলেকট্রনিকস ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, শক্তির উৎস এবং এর প্রয়োগ, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, পারমাণবিক শক্তি, শক্তির রূপান্তর, খনিজ উৎস, আলোক যন্ত্রপাতি, ধাতব পদার্থ এবং তাদের যৌগগুলো, অধাতব পদার্থ, জারণ-বিজারণ, তড়িৎ কোষ, এক্স-রে, অজৈব যৌগ, জৈব যৌগ, তেজস্ক্রিয়তা।
    ♦ জীববিজ্ঞান : পদার্থের জীববিজ্ঞানবিষয়ক ধর্ম, টিস্যু, জেনেটিকস, জীববৈচিত্র্য, প্ল্যান্ট ডাইভারসিটি, এনিম্যাল ডাইভারসিটি, প্রাণিজগৎ, সালোকসংশ্লেষণ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ, ফুল, ফল, রক্ত সঞ্চালন, রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্নায়ু ও স্নায়ুরোগ, খাদ্য ও পুষ্টি, প্ল্যান্ট নিউট্রিশন, ভিটামিন, মাইক্রোবায়োলজি, পরাগায়ণ।

    ♦ আধুনিক বিজ্ঞান : পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস, কসমিক রে, ব্ল্যাক হোল, হিগের কণা, বারিমণ্ডল ও সামুদ্রিক জীবন, বায়ুমণ্ডল, টাইড বা জোয়ার-ভাটা, টেকটোনিক প্লেট, সুনামি, সাইক্লোন, বিবর্তন, মানবদেহ, রোগের কারণ ও প্রতিকার, রোগজীবাণুর জীবন ধারণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, ইমিউনাইজেশন ও ভ্যাকসিনেশন, এইচআইভি ও এইডস, টিবি, পোলিও, এপিকালচার, পিসিকালচার, সেরিকালচার, হর্টিকালচার, ডায়োড, ফোটন কণা, আপেক্ষিক তত্ত্ব, ট্রানজিস্টর, আইসি।

    …………………………

    যেভাবে কার্যকর প্রস্তুতি নেবেনঃ   আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কি না প্রস্তুতির সময় এ কথাটা মাথা থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলুন। অনেক সময় বিজ্ঞানের ছাত্ররা বিষয়টিতে অবহেলা করে পরে খারাপ করে। আবার মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে ভীতি দেখা যায়! আসলে পরীক্ষায়                                                            এ বিষয়টির প্রশ্নগুলো সব শাখার প্রার্থীর কথা মাথায় রেখেই করা হয়। যে ধরনের প্রশ্ন হয়, যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিলেই সেগুলোতে যে কারো ভালো করা সম্ভব। আবার এমনও প্রশ্ন হতে পারে, যা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার প্রার্থীদের কাছে যেমন কঠিন, বিজ্ঞানের প্রার্থীদের বেলায়ও ঠিক তা-ই। তাই একদিকে যেমন বিজ্ঞানের পাঠ্য বই পড়তে হবে, অন্যদিকে গাইড বই ও পত্রপত্রিকাও দেখতে হবে। এ ছাড়া প্রচুর এমসিকিউ অনুশীলন করতে হবে

    । প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বছরের বিসিএসের প্রশ্ন দেখে নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে কোন কোন টপিক থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসে, সে ব্যাপারে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো টুকে রাখতে পারেন। সিলেবাস দেখে টপিক ধরে ধরে কী কী দরকার শুধু ওটুকুই পড়বেন। গাইড বইয়ে অনেক কিছু দেওয়া থাকে, এর সব পড়ার দরকার নেই! দুর্বলতা আছে এমন টপিকগুলোর তালিকা করে বাড়তি সময় দিন। যেগুলো সহজ মনে হয়, সেগুলোও                                                    চর্চা করতে হবে। সহজ টপিকগুলো সহজ ভেবে অবহেলা করলে ফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যখন যে টপিক পড়বেন; অষ্টম শ্রেণি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বই থেকে মিলিয়ে পড়লে ভালো। কোনো টপিক বুঝতে না পারলে গুগলে সার্চ করেও দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া ইউটিউবে বহু টপিকের ভিডিও টিউটরিয়াল বা ক্লাস পাবেন।

    …………………………

    প্রিলি পরীক্ষায় আসা বিজ্ঞানের বেশির ভাগ প্রশ্নের টপিকই অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে পাবেন। এ ছাড়া কমপক্ষে দুটি প্রকাশনীর গাইড বইয়ের সহায়তা নিতে পারেন। আলোচনা একটি বই থেকে পড়লেও এমসিকিউ দেখবেন একাধিক বই থেকে। গাইড বইতে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে বিগত বছরের বিসিএস, পিএসসি নন-ক্যাডার, প্রাইমারিসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন দেওয়া থাকে। সেগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করুন। এখান থেকে প্রশ্ন এলে যেন পরীক্ষায় একটি নম্বরও মিস না হয়। আগের বছরের অনেক প্রশ্নও আবার পরীক্ষায় আসতে পারে। তাই বিগত বছরের প্রশ্ন বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই।

    যাঁদের বিজ্ঞান বিষয়ে দুর্বলতা আছে বা তুলনামূলক কম বোঝেন, তাঁরা কিছু বিষয়বস্তু চাইলে মুখস্থ করতে পারেন। যেমন—বিভিন্ন ধরনের কালচার বা চাষ (পিসিকালচার, এপিকালচার, হর্টিকালচার), বিভিন্ন আবিষ্কার, কোন ভিটামিনের অভাবে কী রোগ হয়, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন প্রকার পরিমাপক যন্ত্র ইত্যাদি। বুঝে বুঝে পড়তে পারলে সেটা সবচেয়ে ভালো হয়। চিত্র, সংকেত, সূত্র বুঝে পড়লে বেশি মনে থাকবে। নিয়মিত পত্রিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতা                                                              পড়ার চেষ্টা করুন। প্রস্তুতির জন্য বিজ্ঞান যত বেশি পড়বেন ততই ভালো। কারণ পরে এগুলো লিখিত পরীক্ষায়ও কাজে দেবে। লিখিত পরীক্ষার গাইড বই থেকে শুধু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও টীকাগুলো পড়তে পারেন। এর ফলে একদিকে যেমন প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষার জন্যও এগিয়ে থাকবেন। মনে রাখা দরকার, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রিলিমিনারিতে শুধু ‘পাস’ করা দরকার, আর লিখিত পরীক্ষায় দরকার ‘ভালো নম্বর’।

    প্রশ্নে কনফিউশন, কী করবেন?   সাধারণ বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক প্রার্থীই বেশ কিছু প্রশ্নে কনফিউশনে পড়ে যান। ফলে পরীক্ষা খারাপ হয়। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই কনফিউশনগুলো দূর করে ফেলুন। কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি একেক বইয়ে একেক রকম দেখে কনফিউশন তৈরি হয়, তাহলে একাডেমিক মূল বইয়ে সেই প্রশ্নসংশ্লিষ্ট অধ্যায় বা বিষয়বস্তুটি খুঁজে বের করে ভালোভাবে পড়ুন। একাডেমিক মূল বইয়ে যে তথ্যটি লেখা আছে, সেটাকেই সঠিক হিসেবে ধরে নিতে হবে।

    সহায়ক বই ও দরকারি অনুষজ্ঞঃ   কোন কোন বই সংগ্রহ করবেন আর কোথা থেকে কতটুকু পড়বেন—
    ১। অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বই (ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, দশম, ১১তম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম অধ্যায়)
    ২। নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বই (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম অষ্টম, নবম, দশম, ১১তম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম)।
    ৩। নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান (চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম)।

    ৪। উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র (চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম, দশম, ১২তম অধ্যায়)।
    ৫। নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম অধ্যায়)।
    ৬। নবম-দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, নবম, ১১তম, ১২তম অধ্যায়)।
    ৭। দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পাতা
    ৮। অনুশীলনের জন্য দুটি ভালো মানের প্রকাশনীর বিসিএস প্রস্তুতির গাইড বই।
    তথ্যসূত্রঃ কালের কন্ঠ (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১)